মানসিক বন্দিদশার লৌহ কপাট ভেঙ্গে বের হয়ে আসার ৭টা ধাপ
সত্যিকারের সুখ পেতে এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি পেতে আমাদের চিন্তার জগৎ অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা ও বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। নিজের এবং অন্যদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলে আমরা নিজেরাই উল্টো ঐ একই নেতিবাচক বলয়ের মধ্যে আটকে পরতে পারি।এর ফলে আমাদের ভিতরে তীব্র রাগ এবং তিক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে। যাদের আমরা প্রচন্ড ভালোবাসি তাদের উপর আমাদের আচরণ প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আমরাই আমাদের সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারি; তবে সুখবর হল, আমরাই আবার আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি।
সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে মানসিক অসুস্থতা থেকে সুস্থ করতে পারেন, এই বিশ্বাস আমাদের অন্তরে থাকলে, আমাদের দেহ ও সত্ত্বা যে কোন ধরনের জটিলতা থেকে মুক্ত হতে পারে। আমি এখানে খুবই সহজ ৭টা ধাপ উল্লেখ করলাম, যার সাহায্যে আপনি আপনার মানসিক বন্দিদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন:
##১) অতীতের সাথে শান্তি চুক্তি করুন
আমরা সবাই আমাদের অন্তরে কোন না কোন পুরানো ক্ষত বয়ে নিয়ে চলেছি। আর যতবারই আমরা সেই পুরানো ক্ষতর কথা স্বরণ করি, ততবারই আমাদের জীবনে সেই আগের দূর্বিষহ কষ্ট চেপে বসে। তাতে আমাদের সেই ক্ষতস্থানগুলো আরো বেশি ক্ষত বিক্ষত হতে থাকে। এর ফলে, দেখা যায় যে, আমরা নিজেরাই নিজেদের উপর অবিচার করি। যে ক্ষমা করে- তার কাছে ক্ষমার কার্যকারীতা বর্ণনা করার প্রয়োজন পরে না। আপনার অতীতের ক্ষত-বিক্ষত পরিস্থিতির মূলকে ক্ষমা করে দিয়ে আপনি আপনার বন্দিত্বের লৌহ কপাট পুনরায় ভেঙ্গে বের হয়ে আসুন। যে শিকল আপনাকে বেঁধে রেখেছে, তা ছিঁড়ে বের হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বাইবেলে সৃষ্টিকর্তা আশ্বাস দিয়েছেন যে, “আমিই আমার নিজের জন্য তোমার অন্যায় মুছে ফেলি; আমি তোমার পাপ আর মনে আনব না।” তিনি যদি আমাদের বস্তাভরা অপরাধ মার্জনা করতে পারেন ও ভূলে যেতে পারেন, তবে আমাদের জন্য একই কাজ করা কি কঠিন হবে? আপনার স্মৃতিতে যখন অতীতের কোন ফোনকল আসবে, সেই কলকে গ্রহন না করে, সেটাকে ভয়েজ মেইলে পাঠিয়ে দিন, কারণ সেই কল নতুন কোন কথা আপনাকে বলবে না।
##২) সুস্থ হবার জন্য সময় নিন
যে কোন কারণেই হোক, মানুষ অসহায়তাকে দূর্বলতার লক্ষন ও মহামারি ভেবে এড়িয়ে চলে। কিন্তু আসলে, ঐ মনোভাবটা একটি অভ্যন্তরীন মানসিক শক্তির লক্ষন। আমরা সবাই অতীতের কোন না কোন ক্ষত বয়ে নিয়ে চলেছি। এর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষত ভীষন গভীর ও যন্ত্রণাদায়ক হয়। তাই আমরা যদি সেই ক্ষতস্থানকে ক্ষমার ব্যন্ডেজ দিয়ে বেঁধে সুরক্ষিত না রাখি ও সুস্থ হবার জন্য সময় না দেই, তবে আমরা ক্ষতগুলোকে, যুদ্ধে বিজয় লাভের ক্ষততে পরিণত করতে পারব না। আপনার আঘাতের কোন অস্তিত্ব নেই এমন ভান করা আপনার মানসিক সুরক্ষার ও সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে, আপনি নিজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েন। মানসিক আঘাত বা ক্ষত কখনও কখনও শারীরিক আঘাতের চেয়েও বেশী যন্ত্রনাদায়ক হয়। তাই উভয় আঘাতকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
“ক্ষত চিহ্নের দাগ আর ক্ষত-বিক্ষত থাকে না, বরং সেই ক্ষত দাগটা সুস্থতার চিহ্ন হিসেবে সাক্ষি হয়ে থাকে।” “কারও ভাঙ্গা হত-পা সুস্থ হবার জন্য যেমন সময় প্রয়োজন হয়, তেমনি আপনার ভগ্ন-চূর্ণ হৃদয় সুস্থ হবার জন্যও সময় প্রয়োজন হয়।”
##৩) অন্যরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবে, সেদিকে লক্ষ্য না দেয়াই ভাল
সবাই চায় যেন মানুষ আমাদের পছন্দ করে এবং আমাদের সাথে মানিয়ে নেয়, আর এই মনোভাব আমাদের স্বভাবের একটা অংশ। মানুষ আমাদের পছন্দ করবে কি না এই ভয় আমাদের পেয়ে বসে, এই কারণে আমরা ভাল থাকবার ভান করে চলি। আমরা নিজের মধ্যে নিজের সম্পর্কে এমন একটা মানদন্ড সৃষ্টি করি যেখানে আমরা কখনও পৌঁছাতে পারব না এবং পৌঁছাতে হলে এর জন্য আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। এই কাজটাকে বলা হয় “জন সন্তুষ্টি”। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব মানসিক শক্তি ও ক্ষমতাকে অন্যের কাছে পুজি করে ফেলি। এতে করে আমাদের মধ্যে থাকা ‘জন-সন্তুষ্টির’ এই স্বভাব আমাদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। সততাপূর্ণ জীবন পরিহার করলে আপনাকে চরম মানসিক দুর্দশা ও বিষণ্ণতার পথ পার করতে হবে।
"আপনার নিজের ভিতরে বিষণ্ণতা বা দূর্বল আত্ম-সম্মানবোধের চিন্তা তৈরী হবার আগেই- আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে আপনি অপ্রত্যাশিতভাবে নিন্দুকদের কবলে পরে যাবেন।”
মনে রাখবেন- আপনার মধ্যে যে তেজ বা আলো আছে তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই আপনাকে গঠন করা হয়েছে। সেই আলো কোনকিছু দিয়ে ঢেকে রাখার জন্য আপনাকে তৈরী করা হয়নি।
##৪) আপনার সুখ-শান্তির দ্বায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে
যে ব্যক্তিটা আপনাকে সবচেয়ে বেশী খুশি রাখতে পারে, সেই ব্যক্তিটা হলেন আপনি নিজেই। আপনার দিন শুরু বা শেষ হবার জন্য আপনাকে কারও উপর নির্ভর করতে হবে না। লক্ষ্য রাখবেন যেন কেউ আপনার মন-মেজাজকে প্রভাবিত করতে না পারে। সুখ পাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করবেন না। ইতিবাচক বা নেতিবাচক যেকোন পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে ভালবেসে যান। প্রতিদিনই আমাদের কোন না কোন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। অনেক সময় সেই সিদ্ধান্তগুলো ভালো হয় আবার অনেক সময় সেগুলো ভুল হয়। তাই বলে কি আমরা আমাদের প্রত্যেকটি ভুল সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেই নিজেদেরকে বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করতে থাকব? নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করুন, “আগামীকাল বা এই সপ্তাহে বা এই মাসে অথবা এই বছরে এই সিদ্ধান্তের কি কোন গুরুত্ব আছে?
সৃষ্টিকর্তা বাইবেলে মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, _“তুমি আমার চোখে মূল্যবান ও সম্মানিত, আর আমি তোমাকে ভালবাসি।”
“আমরা অনিশ্চয়তায় ভূগী, কারণ আমরা আমাদের চারিপার্শ্বের মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আমাদের অতীতের কষ্টকে তুলনা করি।”
##৫) নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করবেন না
যত ভালভাবেই আমরা জীবন-যাপন করি না কেন, আমরা সবাই আমাদের জীবনে কোন না কোন সমস্যা বা কষ্টদায়ক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাই। আমাদের জীবন বাগানের ঘাস সবসময় সবুজ থাকে না! আপনি হয়তো দেখবেন যে, অনেকের জীবন বাগানের ঘাস সবুজ থাকে না, বরং কৃত্রিম প্লাষ্টিকের আবর্জনায় ভরা থাকে। আমাদের প্রত্যেকেরই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিভা ও ঐশ্বরিক দান আছে; অন্যের প্রতিভা ও দক্ষতাগুলোকে হিংসা না করে বরং নিজের প্রতিভাকে মূল্যায়ন করুন এবং নিজেকে বাহবা দিন। আমাদের সবার প্রতিভা একত্রিত হয়েই একটা সমাজ গড়ে উঠেছে। যারা আপনার প্রতিভাকে সম্মান দেবে এবং গুরুত্ব দেবে তাদের আশেপাশে থাকুন। নিজের উপর আস্থা এমনভাবে গড়ে তুলুন যেন সেই আস্থা বা বিশ্বাস আপনার জীবন তরীর নোঙ্গর হয়।
##৬) নেতিবাচক চিন্তা বর্জন করুন
আমরা নিজের সম্পর্কে যে কথাগুলো বলি সেগুলোই তো বিশ্বাস করি, তাই না? আমাদের চিন্তার এবং মুখের কথার বাঁধ-ভাঙ্গা ক্ষমতা ও শক্তি আছে। অনেক সময় তা বৃহৎ আকার ধারণ করে বটে। আপনি যদি কারও জীবনের মন্দ বিষয়গুলো খুঁজতে যান, তবে অবশ্যই খুঁজে পাবেন, কারণ আপনার জীবনেও মন্দতা আছে! নিজের ভিতরের মন্দতাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। সেই মন্দতাগুলো নিয়ে জাবর না কেঁটে বরং, আপনার নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তরিত করুন। যখন আপনি নিজের সম্পর্কে মন্দ কিছু ভাবেন, তখন সেই মন্দ ভাবনাকে পরাভূত করতে ভাল কিছু ভাবনা দিয়ে আপনার চিন্তার জগৎটাকে ঢেকে ফেলুন। এই কাজটা যদি আপনি নিয়মিতভাবে চর্চা করতে থাকেন তবে আপনি নেতিবাচক বলয় ভেঙে বের হয়ে আসতে পারবেন।
##৭) কৃতজ্ঞ থাকুন
আপনার জীবনের যে কোন আশীর্বাদের জন্য প্রতিদিন কৃতজ্ঞ থাকুন এবং এতে দেখবেন আপনি ধাপে ধাপে বদলে যাচ্ছেন। আপনি যখনই আপনার জীবনের আশীর্বাদগুলো অনুধাবন বা উপলব্ধি করতে পারবেন, ঠিক তখনই আপনি লক্ষ্য করবেন এবং বুঝতে পারবেন আপনার ভিতরের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিনই যদি আপনি নিয়মিতভাবে আশীর্বাদের বিষয়গুলো নিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন তবে দেখবেন মানুষও আপনার পরিবর্তনগুলো খেয়াল করছে। কৃতজ্ঞতা স্বীকারের শক্তি আসে আমাদের আশীর্বাদের দৃষ্টিভঙ্গির গভীরতার থেকে। একটা আশীর্বাদ দিয়ে আপনার বদলে যাবার যাত্রা শুরু করুন। প্রতিদিন আপনার আশীর্বাদগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকারের গতি ও মাত্রা বৃদ্ধি করুন এবং লক্ষ্য করুন যে আপনার মনের পাতায় লেখা নেতিবাচক শব্দগুলো দিনে দিনে মুছে যাচ্ছে। অতীতের সেই যন্ত্রনা ও কষ্টগুলো এতো পিছনে চলে যাচ্ছে যে একসময় লক্ষ্য করবেন ওগুলো আপনার আর কখনই মনে পরছে না।
আপনি যদি এই সাতটি ধাপ অনুসরণ করেন এবং ধাপগুলোকে আপনার অভ্যাসে পরিণত করেন, তাহলে আপনি মানসিক বন্দিদশার লৌহ কপাট ভাঙ্গার যাত্রায় প্রবেশ করবেন। এইভাবে বারবার মন দিয়ে যদি ঐ ধাপগুলো প্রতিপালন করেন তবে লক্ষ্য করবেন যে আপনার ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লক্ষ্য করবেন যে, আপনি আপনার আচরণ, মন্দ স্বভাব ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আন্তরিক সতর্কতা ও সচেতনতার কারণে জীবন-ঘুরে যাওয়া-পরিবর্তনের যাত্রায় প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। নিজের মঙ্গল চিন্তা করে সামনের দিকে এগিয়ে যান এবং ইচ্ছার স্বাধীনতার আনন্দ ভূবন উপভোগ করুন।
বাইবেলের একটা কথা দিয়ে আমার অভিজ্ঞতার কলমে লেখা পরামর্শগুলো শেষ করলাম, “তোমরা স্থির থাক, এবং দাসত্ব-জোঁয়ালিতে আর বদ্ধ হইও না।”
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।