বাবা, তোমার উপর ন্যাস্ত দ্বায়িত্ব আমার উপর চাপিয়ে দিও না
আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, তখন একদিন আমার বাবা আমাকে দাদীমার ঘরে যাবার সিঁড়িতে বসিয়ে “কিছু কথা” বলেছিলেন। সেই কথাগুলির সম্পূর্ণ অর্থ আজও আমার কাছে পরিষ্কার নয়, কিন্তু সেই আবেগ অর্ধ শতাব্দী পরে এসেও বার বার ফিরে আসছে; যখনই আমি সেই বিষয় নিয়ে ভাবি আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে, আমি আর আমার বোন, নেব্রাস্কার যে গবাদি পশুর খামারে আমরা বড় হয়েছি, সেখান থেকে শহরের দিকে চলে আসি। আমরা যখন থেকেই এখানে এসেছি, আমার বাবা-মা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কানসাস ও কলোরাডোর মত বড় শহরে আমাদের ভাল পরিবেশে থাকবার জন্য বাসা খোঁজা-খুঁজি করতেন। আমাদের পরিচিত ভালবাসার গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আসার বিষয়টি আমার আর আমার বোনের কাছে খুবই কষ্টকর ছিল। যেখানে আমরা স্বাধীনভাবে ছোট-ছুটি করতাম, গ্রামের অন্য সব ছেলে-মেয়েদের মতই জীবন যাপন করতাম। কিন্তু এখানে আমার কাছে সবকিছুই অপরিচিত লাগে। আমি জানতাম না শহরের জীবন কেমন হয়, কিন্তু এটা অবশ্যই মজার হতে পারে, সব কিছুই যেন নতুন অভিজ্ঞা। একটা বিষয় আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, স্কেট জুতার চাকাগুলি আমাদের সেই গ্রামের নুড়ি পাথরের রাস্তা থেকে শহরের ফুটপাতে আরও ভালভাবে চলে। এ ছাড়াও, আমাদের কাছে বিশেষ মুহুর্ত ছিল সেই সব দিন যখন আমরা আমাদের নানীর সাথে দিন-রাত সময় কাঁটাতাম, বিশেষতঃ যখন আমাদের পিতা-মাতা বাইরে থাকতেন।
বসন্তের এক রৌদ্রোজ্জল দিনে বাবা আমাকে যখন সেই মহা মূল্যবান কথাটি বলার জন্য ডেকেছিলেন, আমি তখনও জানতামও না তিনি কি বলবেন। ভেবেছিলাম সম্ভবত, নতুন বাড়ি কোথায় হবে সেই সিদ্ধান্ত জানাবেন যার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। অথবা কোন বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে, কারণ বাবাকে খুবই গম্ভীর লাগছিল।
সেই দিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা তোমার নানীর ছোট শহরে থাকতে যাচ্ছি।’ আমাদের ভালোর জন্য এই খামার ছেড়ে যাব। যদিও সিদ্ধান্তটা আমাকে দু:খ দিয়েছিল তবুও ব্যাপারটা আমার কাছে দুঃসাহসিক কাজের মত মনে হচ্ছিল….. কিন্তু এরপর তিনি তার আসল মর্মান্তিক সিদ্ধান্তের বোমাটা মেরে আমার সেই কৈশরের পৃথিবীটা ধংস করে দিলেন। জানালেন, তিনি আর আমাদের সঙ্গে থাকবেন না, আমার মা-বাবা আলাদা হয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল, তার কথাগুলি আমার মনের গভীরে ভীষণ ঝাঁকুনি দেয়। আমার বাবা, যিনি আমাদের পরিবারের কর্তা,
তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, এটা ভাবতে গিয়ে আমার মনের ভূবন যখন চরকির মত ঘুরছিল, তখনই তিনি তার দ্বিতীয় বোমাটা ফাঁটালেন যা আমাকে আজও আমার চলার পথকে আহত করে রেখেছে। তিনি আশা করেছিলেন, এই “ছোট্ট মানুষটি, আমি” উঠে দাঁড়াবে, এগিয়ে যাবে পরিবারের হাল ধরবে। এই কথাগুলি বলবার সময় তিনি ঠিক কি কি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন হুবহু তা মনে নেই, সেই মুহুর্তে আত্ম-বিধ্বংসী যে ভয় আমাকে ঘিরে ফেলেছিল তা আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না।
এটা যে শুধু মাত্র আমার মধ্যে অসারতার ভয় তৈরি করেছিল এমন নয়, কিন্তু রাগ ও বিদ্রোহের একটা বন্যা আমার তরুন হৃদয়কে ভাসিয়ে দিয়েছিল। তার এই প্রস্তাবকে প্রত্যাক্ষান করার তীব্র ইচ্ছা আমার মধ্যে জেগে উঠে—আমার এই ছোট হৃদয় থেকে একটা চিৎকার বের হচ্ছিল- এটা “অন্যায়”। এটা আমার দ্বায়িত্ব না! এটা করতে বলাটা ঠিক না!
সেই মুহুর্তেই আমি ঠিক করেছিলাম, এই দ্বায়িত্ব আমি নেব না। বাবা হয়তো তার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন, কিন্তু তা আমার হাতে তুলে দেবার অধিকার তার নেই!
বাবা হয়তো তার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন, কিন্তু তা আমার হাতে তুলে দেবার অধিকার তার নেই!
কখনও কখনও, যখন আমি সেই কথাগুলি মনে করি, আমি অবাক হই, আমি বাবাকে ভীষণ ভয় পেতাম, তা সত্বেও কেন আমি তার কথা মেনে নেইনি। সর্বোপরি, এমন অনেক ছেলেদের গল্প শোনা যায় যে, তাদের পিতা যুদ্ধে গিয়েছেন, বা মারা গিয়েছেন, আর যে কোন ভাবেই হোক তাকে তার মা, আর ভাই বোনদের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। আমার সাথে কি অন্যায় হয়েছিল? আমি কি শুধুই দুর্বল ছিলাম?
আজকে যখন আমি ফিরে তাকাই, তখন আমার এটা মনে হয় না। সেই সমস্ত ছেলেদেরকে তাদের বাবা সেই দিনটির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন যেন তারা একদিন সেই পরিবারের কর্তা হয়। যখন সেই চ্যালেঞ্জ এসেছিল, তা যতটাই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, তারা অনেকটাই প্রস্তুত ছিল। আমার বাবা সব সময় নিজেকে দুরে রাখতেন, আর তার মধ্যে ধৈর্য ছিল না এবং তিনি যে একটি পরিবারকে সঠিক ভাবে চালাতে পারেন এই বিশ্বাস নিজের উপরে ছিল না। তিনি সেভাবে আমাকে তৈরি করেননি, তাই বিশাল শুন্যতা অনুভব করছিলাম। তিনি আমাকে ছুঁটতে শিখিয়েছেন, আমার কাছে মনে হয়, তিনি যেমন ঠিক তেমন।
আমার মত দৌঁড়ে বেড়ানো আর লুকিয়ে থাকা মানুষের জন্য কি কোন আশা আছে?
ভিতরে ভিতরে, আমি দৌঁড়ে বেড়াচ্ছিলাম। কারো সাথে ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ার বা ভালবাসার সম্পর্কে জড়ানোর সামর্থের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত আমার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আমার নিজের মধ্যে আমি একজন প্রকৃত মানুষ ও একজন যোদ্ধা হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম- যার উপরে নির্ভর করা যায়। কিন্তু আমাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে হত, বিশেষত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে, আমার এই ছুটে-চলা অভ্যাস আমার জীবনের অনেকটা স্বভাব হয়ে গেল—যতটা সম্ভব আমি নিজেকে আড়াল করে রাখতাম।
আমার এই উঠে দাঁড়ানো, মানুষ হয়ে উঠতে পারার অক্ষমতা, আমাদের জীবনে অনেক ক্ষতিকর বিষয় হয়ে উঠেছিল; বিশেষত যখন আমার স্ত্রীকে জরুরী দরকার ছিল যেন আমার উপরে কেউ ভরসা করতে পারে, যা আমরা এখনও সাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছি।
আমার মত দৌঁড়ানো- ও- লুকানো মানুষের জন্য কি কোন আশা আছে? নিশ্চয়ই, আমি অবশ্যই বলবো আছে, কিন্তু ধীরে ধীরে চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়াবে এবং যন্ত্রনা দেবে। এর অর্থ হল প্রতিদিন আমার ভয়কে মোকাবেল করতে হবে এবং পালিয়ে না গিয়ে এর মধ্য দিয়েই চলতে হবে। ছুঁটে বেড়ানো এবং পালিয়ে থাকার এই ৫০ বছর পেরিয়ে এসে এটাই বলতে পারি, পথটি সহজ নয়।
আমি আমার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের কাছে চির কৃতজ্ঞ, কারণ তারা আমার দুর্বলতাকে বুঝতো, আমাকে ক্ষমা করেছে, এবং সব সময় পাশে থেকেছে, যেন আমি ধীরে ধীরে সেরে উঠতে পারি। এখন নিজেকে একজন মানুষ মনে হয়, কিন্তু এই অবস্থায় পৌঁছাতে কয়েক দশক সময় লেগেছে, এবং যারা আমাকে ভালবাসে তাদের কাছ থেকে প্রচুর সহানুভুতি পেয়েছি।
ভেঙ্গে যাওয়া একটি পরিবার থেকে যে ধরনের বিষয়গুলি আসে আপনি কি সেই ধরনের কোন বিষয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছেন? আপনার জন্যও আশা রয়েছে। হতে পারে এর জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের এখানে অনেক পরামর্শক আছেন যারা আপনার কথা শুনতে আগ্রহী এবং সাহায্য করতে চান, যেন আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। নীচের ফর্মটি পূরণ করুন, শীঘ্রই কেউ আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।