ভয়ের মাঝে বাস করা
সে যখন আমাকে এটা বললো, আমি তখন আমার ইতিহাসের ক্লাসের ডেস্কে যাবার চেষ্টা করছিলাম। বিশ বছর পরেও, আমি এখনও আপনাদের বলতে পারি সেদিন সে বারগান্ডি রঙের শার্ট পরেছিল। আমার মনে পড়ে সে হেঁটে চলে যেতে শুরু করেছিল এবং একটা মন্তব্য করার জন্যই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তাকে দেখে মনে হল, কথাগুলো বলার আগে সে এক মুহূর্ত ভাবল: “আমি কখনই তোমার চেহারা ভুলবো না। তুমি অনেক কুৎসিত।”
লাঞ্ছনা বিভিন্ন রূপে হতে পারে। কাউকে জোর করে লকারে আটকে রাখা হয়। কাউকে চারপাশ থেকে ধাক্কা দেয়া হয় অথবা মারধোর করা হয়। কেউ কেউ রুমে ঢুকলে অন্যেরা সবাই অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আমার জন্য এটা ছিল কথা। “তুমি অনেক বোকা” আর “তুমি জানো যে কেউ তোমাকে পছন্দ করে না, তাই না?” কখনও এটা ছিল আমি দেখতে কেমন এটা নিয়ে মন্তব্য, আবার কখনও আমি স্কুল বাসে উঠে শুনতাম আমি বিছানায় কেমন তা নিয়ে কে কি ভাবে তার বিশদ বর্ণনা।
এটা চলতেই থাকল। ওরা ছিল ছয়জন আর আমি একা তাই আমি দ্রুতই চুপ করে থাকা শিখে গিয়েছিলাম। মাথা নিচু করে থাক। একটা কথাও বলো না। অদৃশ্য হয়ে যেতে চেষ্টা কর। হয়ত তারা যদি ভুলে যায় যে তুমি এখানে আছ তাহলে তারা থেমে যাবে।
এটা থামেনি।
এটা ক্লাস সিক্সে, বা ক্লাস সেভেনে বা এইটেও থামেনি। যখন আমি হাই স্কুলে পড়া শুরু করি আমি তখন আশা করেছিলাম ১,২০০ জন ছাত্রছাত্রীর ভিড়ে আমি হারিয়ে যেতে পারব, কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। এটা ওই বছর থামেনি, অথবা পরের বছরেও না বা আরও এক বছর পরেও না।
আমি বাস থেকে নেমে যত ধীরে সম্ভব হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। এটা এমন না যে আমি বাড়ি ফিরতে চাইছিলাম না; এটা এমন ছিল যে আমি জানতাম এখন থেকে ১৮ ঘণ্টা পরে আমাকে আবার ফিরে যেতে হবে। এই সময়টুকু দিনের সবচেয়ে নিরাপদ সময় ছিল কিন্তু ঘড়ি ঠিকই টিকটিক করে চলছিল।
মাথা নিচু করে থাক। একটা কথাও বলো না। অদৃশ্য হয়ে যেতে চেষ্টা কর। হয়ত তারা যদি ভুলে যায় যে তুমি এখানে আছ তাহলে তারা থেমে যাবে। এটা থামেনি।
আমি অভিজ্ঞতা থেকে আপনাকে বলতে পারি জীবনের সবচেয়ে ক্লান্তিকর বেঁচে থাকার উপায় হল ভয়ের মাঝে বেঁচে থাকা। আমার জন্য সন্ধ্যা এবং সপ্তাহের শেষে ছুটি ছিল। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে একটি মিথ্যা এক সেকেন্ডের মধ্যেই ছড়িয়ে যায় এবং সকালে বিছানা ছাড়ার আগেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এই লাঞ্ছনাগুলো আপনি পেতে থাকেন, এটা একজন ছাত্রের জন্য কত কঠিন বিষয় তা আমি কল্পনাও করতে পারি না।
আমি এখন যা জানি তা হল: যদি আমি চাইতাম তবে সাহায্য পাওয়া যেত। আমি লাঞ্ছনা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম কিন্তু এটা আরও আগে সম্ভব হত যদি আমি কারও কাছে আমার সাথে কি হচ্ছে তা খুলে বলতাম। আমি কিছু বলতে খুব ভয় পেতাম, মনে হত এটা আরও খারাপ হবে। আমি কখনও একটা কথাও বলিনি। এটা শেষ হয়ে যাবার অনেক বছর পরেও আমি আমার বাবা-মাকে কিছু বলিনি। যখন আমার একজন প্রিয় শিক্ষক আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ওই ছেলেগুলো কি তোমাকে বিরক্ত করছে?” আমি তার মুখের উপর মিথ্যা কথা বলে দিয়েছিলাম।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে আমি বুঝি যে ভয় দেখান লাঞ্ছনার একটা অংশ। এটি অন্যান্য নিপীড়নেরও একটি রূপ। যার ক্ষমতা বেশি সে ভুক্তভোগীকে একা করে ফেলে। সে তাকে বুঝিয়ে ফেলে যে তার চিন্তা সঠিক নয়। সে তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয় যে, কেউ তার কথা শুনছে না যে, সে অদৃশ্য। সে আপনাকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলে যে আপনাকে নিয়ে কারও কিছু যায় আসে না এবং কেউ যদি জানতেও পারে আপনার সাথে কি ঘটছে, তবুও তারা আপনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। লাঞ্ছনাকারী এবং নির্যাতক আপনাকে বুঝিয়ে দেয় যে আপনি একেবারেই একা এবং সেটা খুবই বিপদজনক জায়গা।
তারা যে খারাপ কথাগুলো বলেছিল সেগুলো সত্যি, এই বিশ্বাস আমাকে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করার দিকে ঠেলে দিল। আমি শুনেছি যে লোকে বলে, “আত্মহত্যা হল সাময়িক সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান” এবং সত্যি কথা বলতে, এটি ভুয়া ছিল। যতক্ষণে আমি আত্মহত্যার জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম ততক্ষণে ছয় বছর ধরে আমি মৌখিক এবং সংবেদনশীল লাঞ্ছনার সাথে মানিয়ে চলছি। এটা “সাময়িক” নয়। আমার বয়স ততদিনে ১৬ হয়ে গিয়েছিল, যা আমার জীবনের প্রায় অর্ধেক।
আত্মহত্যা বা লাঞ্ছনার মত ভয়ানক এবং মারাত্মক জিনিসগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সময় ভাল এবং সুন্দর কথাগুলো কাজে আসে না। যা কাজে আসে তা হল আত্মহত্যা থেকে দূরে রাখার একটি সাইটের এই সংজ্ঞা: “আত্মহত্যা করাকে বেছে নেয়া হয় না; এটা তখনই ঘটে যখন সহ্য ক্ষমতার চেয়ে আঘাতের মাত্রা বেশি হয়।”
আত্মহত্যা তখনই ঘটে যখন আপনার বয়ে নেয়া অসহনীয় ব্যথা আপনাকে চুরমার করে ফেলে। এটা কোন নিছক অজুহাত, ব্যক্তিগত পছন্দ, সহজ উপায় বা পালিয়ে যাওয়া নয়। এটা সেই যুদ্ধের শেষ দৃশ্য যেটা কখনই শুরু থেকে ন্যায্য লড়াই ছিল না। আত্মহত্যা সবসময়েই দুঃখজনক। এটা সবসময় সবচেয়ে খারাপ পরিণতি। যদি আপনি নিজে আত্মহত্যা করতে চান অথবা এমন কেউ থাকে যে আত্মহত্যা করতে চাচ্ছে, তাহলে ফোন হাতে নিন এবং 1 800 SUICIDE এ ফোন করুন। সেখানে আরও ভাল উপায় আছে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে আমি আরও একটা বিষয় জানি। যে লাঞ্ছনামূলক কথাগুলো আপনাকে বলা হয়েছে এটা আপনার মাথা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে যেতে, সেই কণ্ঠগুলো মুছে যেতে অনেক, অনেক সময় নেয়। যখন আপনি একই কথা বারবার শোনেন, তখন তা আপনার মাথায় গেঁথে যায়। আপনার নিজস্ব চিন্তায় ফিরে আসা সম্ভব, তবে এটি সময়সাপেক্ষ।
আত্মহত্যা তখনই ঘটে যখন আপনার বয়ে নেয়া অসহনীয় ব্যথা আপনাকে চুরমার করে ফেলে। এটা কোন নিছক অজুহাত, ব্যক্তিগত পছন্দ, সহজ উপায় বা পালিয়ে যাওয়া নয়। এটা সেই যুদ্ধের শেষ দৃশ্য যেটা কখনই শুরু থেকে ন্যায্য লড়াই ছিল না।
প্রথম যখন আমি পুরো গল্প বলি, আসল গল্প, আমার সাথে যা ঘটেছে, আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে। একজন খুব ভাল বন্ধু আমার হাত ধরেছিল এবং আমি কাঁপতে কাঁপতে বলে ফেলেছিলাম। আজ পর্যন্ত সেই একমাত্র মানুষ যে সবটা জানে।
সে আমাকে একটি চিঠি লিখেছিল যা আমি প্রতিবার পড়তাম যখন আমার মাথায় পুরোনো চিন্তাগুলো চলে আসত। যখন আমি সবকিছু নিয়ে দ্বিধায় ভুগতাম তখন এটা এমন একটা কিছু ছিল যা আমি শক্ত করে হাতে ধরে রাখতে পারতাম । এটা আমার দীর্ঘদিনের সহায়ক ছিল। আমার বলতে ভাল লাগছে যে অনেকদিন ধরেই সেটিকে আমার আর বের করতে হয় না।
যদি আপনি লাঞ্ছিত হন তবে এই কথাগুলো আপনার জন্যে। তার এই কথাগুলো আপনি আপনার জন্য নিতে পারেন:
ওই কথাগুলোতে কান দিবেন না। আপনি সুন্দর। আপনি বুদ্ধিমান। আপনাকে সবাই ভালবাসে। আপনি একা নন।
যদি আপনি লাঞ্ছিত হন বা আপনাকে হাই স্কুলে থাকতে যা বলা হত তা আপনি এখনও শুনে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন, আপনি একা নন। তারা যা বলে আপনি তা নন। আপনি যদি এই বিষয়ে কথা বলতে চান তাহলে আমরা পাশে আছি। শুধু নিচে আপনার সাথে যোগাযোগের তথ্য দিন, খুব শীঘ্রই আপনার সাথে আমাদের একজন যোগাযোগ করবে।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।