সবকিছু ভালই তো ছিল!

সে ঘরের একপাশে একা একা বসেছিল। সিনিয়র ক্লাসের নতুন কেউ হবে হয়ত। আমি নিজেই অবাক হলাম, যখন বুঝলাম কেন যেন আমার দৃষ্টি বারবার ওর দিকে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই দু’জনের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় হয়। এক ধরনের অনুভুতি বিদুৎ গতিতে আমাকে জড়িয়ে ফেলে, আমি ভীষণ অবাক হই। থতমত খেয়ে চোখের পাতা নামিয়ে নিজের দিকে ফিরে আসি। সেও তাই করল। খুব আড়ালে আমি আবার ওর দিকে তাকাই। কিন্তু আমি ওর কাছে ধরা পরে যাই। আমি আমার পাশে বসা বান্ধবীদের বিষয়টা বললাম। ওদের বললাম, “তোরা আমার সঙ্গে চল, আমি ওকে ‘হেলো’ বলব।” একা গিয়ে বলার চেয়ে সবাইকে নিয়ে গিয়ে বলা অনেক নিরাপদ।

সে আমাদের সাথে আড্ডা দিতে শুরু করে আর সবাই তাকে মেনেও নিতে শুরু করে। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা দু’জন অজান্তেই দল থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। দু’জন পাশাপাশি হাঁটতাম, ঘরের কোন এক কোনায় বসে গল্প করতাম। অনুভূতি প্রকাশের জন্য আমরা একে অপরকে স্পর্শ করতে শুরু করলাম। দু’জন দু’জনের খুব কাছাকাছি বসতে শুরু করলাম। জীবনে ঐ প্রথমবার নিজেকে সুন্দরী ভেবে পুলকিত হয়েছিলাম। আমার পৃথিবী গোধূলী আলোর ছটায় ভরে গিয়েছিল।

প্রথম প্রথম আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করত। তা দেখে, আমার বন্ধুরা আমাদের সম্পর্ককে ‘মধুর’ বলে মন্তব্য করত। সে সত্যি সত্যিই আমার মন জয় করে ফেলেছিল, আমি যা পছন্দ করতাম সে সেগুলোই করত। ছোট হলেও সে আমার পছন্দ মত উপহার এনে দিত। সে আমার মনের সকল চাওয়া পাওয়া বুঝত। তার এসব দেখে আমার হৃদয় আহ্লাদে গলে যেত। আমি তার কথায় এমন বিভর হয়ে যেতাম যে সে আমাকে যা করতে বলত, সেটা যদি আমার করতে ইচ্ছা নাও করত, তাও আমি করতাম। কারণ, আমি তার খুশী দেখতে চাইতাম। আমি সাধারণত যেসব কাজ করতাম, তাকে খুশি করার জন্য সেই কাজও করতাম। যতক্ষন তার সাথে থাকতাম, আমার দারুণ লাগত। সবাই বলত, আমরা নাকি একে অপরের জন্যই তৈরী হয়েছি! আমরা একে অপরকে না দেখে থাকতে পারতাম না, যেন আঠার মত লেগে আছি।

এরপর একদিন ‘সে’ আমাকে বলল, “আমাকে একটু একা থাকতে দাও!” তার ঐ কথা শুনে মনে হল যেন আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরেছে।

ক্রমশই পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। প্রথমদিকে তার ঐসব আচরণগুলো আমি আসলেই খেয়াল করিনি, অথবা করতে চাইনি। কখনো আসতে এক ঘন্টা দেরী হলে, সারা বিকাল সেজন্য ক্ষমা চাইত। তার চোখের নীচে কালো দাগ কেন জানতে চাইলে সে স্কুল এবং কাজের চাপ ইত্যাদি বলে এড়িয়ে যেত। মাঝে মাঝে সে এতো উদাসীন হয়ে যেত যে তাকে ধাক্কা দিয়ে আমার বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে হত। এরপর একদিন সে আমাকে বলল, “আমাকে একটু একা থাকতে দাও!” তার ঐ কথা শুনে মনে হল যেন আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরেছে।

কষ্ট হলেও, আমি তাকে একা থাকার সময় দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়ত এটা সাময়িক। কারণ আমরা সবাই তো কোন না কোন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাই। আমি সবসময় তার সঙ্গ চাইতাম, কিন্তু সে কেন যেন সবসময় একাই থাকতে চাইত! আমি চেষ্টা করতাম যেন বিষয়টা আমার উপর প্রভাব ফেলতে না পারে, কিন্তু নিজের কাছে হেরে গেলাম। আমার প্রতি তার মনোযোগ কেন এভাবে পরিবর্তিত হলো সেটা আমি কীভাবে জানতে পারব, সেই চিন্তায় বিছানার বালিশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম।

সে আগের মত আমার আশেপাশে ততটা থাকতে চাইত না। আমি দেখতাম সে আমার জীবন থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। একদিন সে আমার সাথে সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে, আমাকে বিধ্বস্ত করে চলে গেল। আর আমি একা একা বিভ্রান্তে, অবজ্ঞায়, যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়লাম। আমি কী এমন করেছিলাম, সেটা এখনও ভেবে পাই না!

তার সাথে অন্য আর একটা মেয়ের সম্পর্ক ছিল এবং আমার বান্ধবীরা তাদের একসঙ্গে দেখেছে। তারা আমাকে প্রায় এই কথাটা বলতে চাইতো, কিন্তু আমি সত্যিটা শুনতে চাইতাম না। দুই মাস পরে হঠাৎ একদিন সে আমাকে আমাদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় দেখা করতে বলে। সে আমাকে কিছু বলতে চায়। এতোদিন পর তাকে দেখে আমি প্রায় চিনতেই পারছিলাম না। ওর গায়ের রং কেমন যেন ফ্যাকাসে হেয়ে গেছে, চোখ দু’টো ভিতরে ঢুকে গেছে। ‘আমাকে বলল,“আমরা একে অপরের এতো কাছাকাছি চলে এসেছিলাম যে এর পরিণতি কী হবে ভেবে ভয় পেয়েছিলাম, তাই এতোদিন দূরে সরে ছিলাম, কিন্তু তোমাকে ছেড়ে থাকার কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিলাম না ।” তার কথা শুনে, আমি তাকে আবার কাছে টেনে নেই। আমরা আগের মত আবার মেলামেশা শুরু করি। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সে আবার পাল্টে যেতে শুরু করে। এবার আমি নিজেই তার কাছ থেকে দূরে সরে আসি। একজন বিখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক বলেছিলেন, "আমাকে একবার বোকা বানিয়েছ, তুমি লজ্জা পেয়েছ। আমাকে দু’বার বোকা বানিয়েছ, এবার আমি লজ্জা পেয়েছি।”

তিন মাস পর সে একদিন আমার কাছে আসল। সবকিছু অবশেষে স্বীকার করল। বলল যে, প্রথম থেকেই সে ড্রাগের নেশায় মত্ত ছিল। আর আমি ছিলাম তার দ্বিতীয় প্রেমিকা । সে ভেবেছিল আমি পরোপকারী ও ভাল একজন মানুষ, ভেবেছিল আমি হয়ত তাকে তার কু-অভ্যাস থেকে বাঁচাতে পারব। কিন্তু অন্য মেয়েটার আকর্ষণ আর ড্রাগ ওকে এতো বেশী টেনে নিয়ে যাচ্ছিল যে সে কোনভাবেই সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারছিল না। তার প্রথম প্রেমিকা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। মেয়েটাকে সে ভাল না বাসলেও তার সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছে এবং শিশুটার দিকে তাকিয়ে তারা নেশার মত্ততা থেকে বের হয়ে আসবার জন্য দু’জনেই রিহ্যাবে থেকেছে। আমার মনের একাংশ তার সততা ও সাহসের প্রশংসা করলেও, তার চোখের দৃষ্টি আমি পুরোটা সময় এড়িয়ে গিয়েছি।

জীবন সঙ্গী হবে ভেবে যাকে বেছে নিয়েছিলাম সেই ভুল মানুষটা আমাকে জীবনের অনেক ইতিবাচক দিক শিখিয়েছে। শিখিয়েছে যে, যৌনতা এবং আবেগ সম্পর্কের ভিত্তি হয় না। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে এবং একাঙ্গ হবার পূর্বেই একে অপরকে বুঝতে হবে, চিনতে হবে, জানতে হবে। আপনার পরিবার ও তাদের নিজের পরিবারের সঙ্গে তারা কেমন আচরণ করে তা লক্ষ্য করুন। তার সম্পর্কে আপনার বন্ধুদের মন্তব্য কী সেটাও যাচাই করে দেখুন, কারণ তারা আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।

আপনি যাকে আকর্ষণ করতে চান তার কাছ থেকে আপনার সত্যিকার স্বভাব লুকিয়ে রাখবেন না, লুকিয়ে রাখলে সম্পর্ক গভীর হয় না। সবসময় তাদের খুশি করবার জন্যই কিছু করতে হবে বা বলতে হবে তা কিন্তু ঠিক না। কারণ সেটা অনেকটা ভণ্ডামি বা ধোকা দেয়ার সমান। আপনি যেমন ঠিক তেমনভাবেই যদি তারা আপনাকে মেনে না নেয় তবে সেই সম্পর্ক বেশী দিন টিকবে না। যদি তারা আপনার দেরী করে আসা, ব্যস্ততা এবং ঠাট্টা-তামাসা মেনে নিতে না পারে, তবে আসলে তারা মন থেকে আপনাকে ভালবাসে না।

আপনি যেমন কাউকে পরিবর্তন করতে পারবেন না তেমনি আপনাকেও কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। যার হৃদয় আপনি জয় করতে চান তার কাছে আপনি ঠিক যেমন তা থেকে আলাদা হবার চেষ্টা করবেন না। যদি আপনি নিজের ভিতরে কোথাও পরিবর্তন আনতে চান, তবে নিজেকেই সেই পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করতে হবে। আপনার পরিবর্তনের দায়ভার কারো উপর চাপিয়ে দেয়াটা অন্যায়। আবার আপনার প্রত্যাশা অনুসারেই যে সবকিছু ঘটবে সেরকম আশা করাটাও ঠিক না।

আপনি যেমন কাউকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। তেমনি আপনাকেও কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।

আপনি যদি মনে করেন আপনার নিজের ভিতরে কোথাও পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে, তবে আপনাকে নিজেই এর সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। আপনার ভাল লাগা কারও সঙ্গ বা পাশে থাকার উপর নির্ভর করে না। আপনার আসল স্বভাব জানলে সে কী ভাববে তেমন চিন্তা করাটা উভয়ের জন্যই খারাপ। যদি আপনার স্বরূপ প্রকাশ পায় তাহলে হয়তো সে আপনাকে আর পছন্দ করবে না, এরকম মনোভাব থাকাটাও ঠিক না। আপনার আসল আচরণ বা স্বভাব লুকিয়ে রাখলে সে হয়তো আপনার প্রবঞ্চনাকে ব্যবহার করে আপনার উপরই সুযোগ নিতে পারে। এর ফলে হয়তো বা কোন এক পক্ষ অথবা উভয় পক্ষই ভীষন কষ্ট বুকে চেপে নিয়ে দূরে চলে যাবে।

আপনি যদি এ ধরণের হৃদয়বিদারক ব্রেকআপ বা সম্পর্ক ভাঙ্গনের ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা জানি এর কষ্ট কতটা মর্মান্তিক ও অপমানজনক হতে পারে। এর ফলে, আমাদের ভিতরে রাগ আর বিতৃষ্ণাবোধ জন্ম নেয়। একাকীত্বের তীব্র যন্ত্রনা শরীর ও মনের সব স্থানেই ছড়িয়ে পরে এবং সন্দেহ দানা বাঁধে। এতে করে আপনার মনে হতে পারে, আপনি যে একটি সম্পর্কে আবদ্ধ আছেন, সেটা হয়ত আপনার অনেক বড় একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই কারণে, আমরা আপনার কথা শুনব, পাশে থাকব, সঙ্গে চলব, সাহায্য করব যেন আপনি আপনার অন্তঃর্জালা থেকে মুক্তি পান। আমাদের একজন বিশ্বস্ত মেন্টর আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য প্রস্তুত। আপনার সমস্ত তথ্য গোপন থাকবে, এই প্রতিশ্রুতি দিলাম।

নিচের ফর্মটা পূরণ করুন এবং আপনি খুব শীঘ্রই আমাদের কাছ থেকে সারা পাবেন।

ছবি স্বত্ব নিকোলাস পস্টিগ্লিওনি

আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.