চুপিসারে ধেয়ে আসছে অন্ধকার

২০১৬ সালের জানুয়ারী মাসের শুরুতে আমার মধ্যে হতাশা-জনিত বিষন্নতার মানসিক রোগ ধরা পরে। আমার জীবনের গতি মনে হল যেন অচল হয়ে পড়ল। আমি আমার পরিবারে ও কাজ কর্মে কোথাও মন বসাতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল যেন চুপিসারে ঘন অন্ধকার মেঘ ধেয়ে আসছে আর আমার মন ঢেকে দিচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, কথাবার্তা বা কোন কাজের সমাধান ইত্যাদি সাধারণ দৈনন্দিন কাজ করাও আমার জন্য ভীষন কঠিন হয়ে উঠছিল।

ভয়ের বিষয় হলো, এই বিষন্নতা নীরবে নিভৃতে আমার মাথায় ঢুকে পড়েছিল। কোন কারণ ছাড়াই ক্লান্তিভাব, খিটখিটে মেজাজ, ঘুম না আসা, এলোমেলো চিন্তা, অন্য-মনষ্কতা এগুলো যে বিষন্নতার লক্ষণ তা বুঝতে পারিনি। আরো একটি লক্ষণ ছিল যে আমি আমার শান্তি আর আনন্দ একেবারেই হারিয়ে ফেলছিলাম।

যতদূর মনে পড়ে, আমার অফিসে যাবার কোন ইচ্ছাই হতো না, কারণ আমি আমার ব্যবসার নতুন দ্বায়িত্বের কাজগুলোতে মন বসাতে পারছিলাম না। আতঙ্ক প্রতিনিয়ত আমার ভিতর চেপে বসছিল। কাজের শেষে আমি যখন বাসায় ফিরতাম তখন দুঃশ্চিন্তা হতো এই বুঝি আমার চাকুরী চলে যাবে আর আমার পরিবারের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। এই অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপের দিকে যেতে থাকলো। বিছানায় সারারাত জেগে থাকতাম, আমার মন সবসময়ের জন্য অস্থীর থাকতো, কল্পনায় অবাস্তব সব চিন্তা করতাম। আর সারারাত জেগে থাকার কারণে পরের দিন ভীষন কষ্ট হত, এভাবেই বিষন্নতার দুষ্ট চক্রে আমি আটকে গেলাম।

এই কষ্ট থেকে বের হওয়ার কোন পথ ছিল না

সেই সময় আমার কাছে এই বিষন্নতার কারণ স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু এখন যখন পিছনে ফিরে তাকাই তখন কারণ হিসেবে বেশ কিছু ঘটনার কথা মনে পড়ে। আমার চাচার মৃত্যুর পরপরই আমার চাচাতো ভাইয়ের মৃত্যু আমাকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। কারণ, তাদের সাথে আমার খুবই ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। এই মন-কষ্ট থেকে বের হওয়ার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একজন পুরুষ হিসেবে, স্বামী হিসেবে, বাবা হিসেবে এবং বাবা-মার একমাত্র সন্তান হিসেবে আমাকে শক্ত থাকতে হয়েছিল, পরিবারকে টিকিয়ে রাখতেই আমাকে চকুরীতে বহাল থাকতে হয়েছিল।

ঠিক ঐ সময়েই আমি পরিবারের আরও বেশ কিছু কঠিন সমস্যার সম্মুখিন হই। আমার মার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে, বয়সের কারনে সেটি তার জন্য প্রাণঘাতি হতে পারত। ঐ একই সময়েই আমার শ্বাশুরী উভয় হাটু প্রতিস্থাপনের অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দু’মাসও হয়নি আমি নতুন চাকুরীতে ঢুকেছি। আর সেই চাকরীটি টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খাচ্ছিলাম।

আমি আত্মহত্যার চিন্তা করতে শুরু করলাম। কিন্তু আমি না থাকলে আমার পরিবারের কী হবে এই ভাবনা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াত। আমার এক চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী ডাক্তার ছিলেন, আর তিনি আমাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বললেন। আমি তাই করলাম। চিকিৎসক আমাকে বেশ কিছু ঔষধ লিখে দিলেন ঠিকই, কিন্তু আমার অবস্থা আরও অবনতি হতে থাকে। এতে আমার ভিতরটা আরও এলোমেলো হয়ে পড়ে। ভাবতাম, ভাল না হয়ে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে কেন?

আমার পরিবারের খুবই কাছের একজন ডাক্তার আমাকে কোন মানসিক রোগের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বললেন। আমি তাই করলাম। আমার সমস্ত কথা শুনে তিনি আমাকে নতুন একটি ঔষধের কোর্স লিখে দিলেন। উনি খুবই ধৈর্য সহকারে আমার কথাগুলো শুনছিলেন, আমিও আমার ভিতরের সমস্ত অনুভূতিগুলো খুলে বলছিলাম। এতে ধীরে ধীরে আমি সেরে উঠতে লাগলাম। কয়েক মাস যাবৎ এই চিকিৎসা চলতে থাকলো এবং অবশেষে ডাক্তার এবং আমি, দুইজনই বুঝলাম যে আমার আর চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

আমি এমন কিছু আবিষ্কার করলাম যা আমি খুব কমই পেয়েছি, আর তা হলো —গ্রহণযোগ্যতা

ঠিক ঐ সময় আমার স্ত্রী একটি আধ্যাত্বিক সংগঠনে যাতায়াত করতো, আর প্রায়ই সে আমাকে তার সাথে নিয়ে যেতে চাইতো। তাই একদিন ইচ্ছা না থাকলেও তাকে খুশী রাখতেই তার সাথে গেলাম। কারণ, আমি বুঝতেই পারছিলাম না ঐ সংগঠন আমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারে! কিন্তু কয়েকবার যাবার পর, আমি এমন কিছু আবিষ্কার করলাম যা আমি খুব কমই পেয়েছি, আর তা হলো - গ্রহণযোগ্যতা। এই সংগঠনের অন্যকে আপন করে নেয়ার গুণ আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, আর এতে আমি ব্যক্তি হিসেবে, স্বামী হিসেবে ও বাবা হিসেবে আমার প্রকৃত গুরুত্বকে বুঝতে পারি। এখন আমার প্রাণের ইচ্ছা যেন আমার ছেলে মেয়েরা ও আমার স্ত্রী বুঝতে পারে যে তারা আমার কাছে কতটা মূল্যবান।

ঠিক তেমনি আপনিও যদি বিষন্নতার কবলে আটকে পড়েন, আপনার জন্য সুসংবাদ হলো আপনি এই বিষন্নতার যাত্রায় একা নন। এই বিষন্নতা অনেক সময় আমাদের একাকিত্বের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর এই নিরাশার ঘন কুয়াশা কাটিয়ে বের হওয়ার জন্য আমাদেরকে উল্টোটা করতে হবে। অন্যদের কাছে আমাদের এই কষ্টের কথা খুলে বলা খুবই জরুরী।

এই ওয়েবসাইটের মধ্য দিয়ে আপনার সমস্ত কষ্টের কথা পরামর্শদানকারীদের কাছে খুলে বলতে পারেন। বিনামূল্যে ও সমস্ত গোপনীয়তা বজায় রেখেই তারা আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। নীচের অংশটি পূরণ করার পর আপনি শীঘ্রই এর উত্তর পাবেন। চাইলে আসল নাম আপনি গোপন রাখতে পারেন।

ছবি স্বত্ব নবনীত মহাজন

আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.