আত্ম-গোপনে সঞ্চিত কষ্ট

আমার শৈশব, কৈশর ও যৌবন সবার মতই তো হতে পারত? এই প্রশ্ন বহুদিন যাবৎ আমার জীবনে বয়ে নিয়ে চলেছিলাম। প্রচন্ড কষ্ট হতো যখনই মনে পড়ত। অসম্ভব যাতনা মনে চেপে রাখতাম, ভীষণ যন্ত্রণা হত। আমার মনের পর্দায় সেই ষ্মৃতির ছবিগুলো একের পর এক এসে ভীড় করত। কেউই বুঝত না, বুঝতেও দিতাম না। ভাবতাম “কে বুঝিবে মনে, যাতনা কারে বলে”। নিজের মর্মব্যাথা নিজের মধ্যেই অগোচরে লুকিয়ে রাখতাম।

দু’বছর বয়সে আমি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হই, একটানা ১০দিন তীব্র জ্বরে ভুগিয়ে অবশেষে একটি অঙ্গ হানি করে সেই ভয়ানক পোলিও ঘাতক রোগটি আমার দেহ থেকে অট্টহাসি দিয়ে বেরিয়ে যায়। আমার বাম পা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, মাংশপেশী দূর্বল হয়ে পড়ে, রক্তচলাচল নালীগুলো সরু হয়ে যায়, শক্ত রগগুলো স্থবির হয়ে যায়, হাটু ও গোড়ালীর অংশটুকু একেবারেই শক্তি হারায়। যে একসময় সুন্দর সুন্দর রঙ্গ-বেরঙ্গের জুতা-সেন্ডেল পরে দৌড়ে বেড়াত, সে আর ওগুলো পড়তে পারে না। খালি পায়ে ভীষণ কষ্টে চলাফেরা করতে শিখে। শৈশবের চঞ্চলতা কোথায় যেন পালিয়ে যায়!

আমার বাবা-মা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে আমাকে সচল রাখতে। ছোট্ট আমি জানতে চেয়েছিলাম, “আমি হাঁটতে পারছি না কেন মা?” চোখের জলে মা আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু কেঁদেছে, তার কোনই উত্তর জানা ছিল না। ভাবিনি আমাকেই একা একা এই দুর্বিষহ দূর্বলতা নিয়ে জীবনের পথে চলতে হবে। শৈশবের অনুভূতির জায়গা তখনও কষ্টের বিষন্নতাবোধ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বুঝতো না, এটাই তো স্বাভাবিক! খুড়িয়ে খুড়িয়ে খালি পায়ে হাঁটতে শিখি। স্কুলে ভর্তি হই, শুরু হয় আমার যাতনার যাত্রা! শৈশবে প্রায় প্রতিদিনই স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীতে আসতাম। কেউ কিছু জানতে চাইলে, চুপ করে থাকতাম। ল্যাংড়া, খোড়া, নেংড়া ইত্যাতি আরও অনেক নামে ডাক শুনতে শুনতে যেন আমার আসল নাম ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল, ঐ শব্দগুলো সারাদিন শুনতে শুনতে কান ভারি হয়ে আসতো। কোন কোন শিক্ষক ওদের সাথে তাল মিলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসত। ওরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে মজা পেত, পড়ে গেলে অট্ট হাসি হাসত। বড়রা আমাকে হাত ধরে জোরে জোরে ঘুরাতো, আমার কেমন লাগে তা দেখে মজা করত, মাটিতে পড়ে গেলে আমার বাম পা ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেত। আমি চিৎকার করে কাঁদতাম, আর বাঁচতে চাইতাম! এ যেন সার্কাস খেলা!

এভাবেই কৈশরের আরও অনেক দু:খের স্মৃতি নিয়ে যৌবনে পা রাখি। ভাল বন্ধু খুঁজে পাই, যারা আমাকে সাহায্য করত, দূর্বলতা সত্বেও আমাকে উৎসাহ দিত, কেউ কিছু বললে, ওরা প্রতিবাদ করত। আমাকে ওরা প্রচন্ড ভালবাসত। আমার বুদ্ধি, প্রতিভাকে বড় করে দেখত। এরপর আমি গোপনে চেপে রাখা কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসি, নিজেকে সম্মান করতে শিখি। আমার বন্ধুরা এখনও আমাকে তাদের প্রিয় বন্ধু হিসেবে আগলিয়ে রেখেছে। আমার জীবন-সঙ্গি আমার বাম পায়ের শক্তি হয়ে আমাকে বয়ে নিয়ে চলেছে। এখন আমি পরিপূর্ণ একজন স্বাভাবিক মানুষ।

সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাসও আমার মনোবলকে চলমান রেখেছে, তিনি আমাকে সেই সব স্মৃতির পাতার মানুষগুলোকে ক্ষমা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

বন্ধুরা, একজন উত্তম বন্ধুই আপনার কষ্টকে বুঝতে পারে। আমার মত আপনিও তাদের হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারেন।


আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.