একটি ব্যর্থতার প্রেসক্রিপশন

কলেজ থেকে বের হওয়ার পর আমি মাইগ্রেনের সমস্যায় পড়েছিলাম। একদিন বিকেলে ডেস্কের নিচে শুয়ে তীব্র ব্যথা সহ্য করছিলাম। আমি কিছু এক্সসেড্রিন খেয়ে শুয়ে রইলাম কয়েকদিন। শেষে ব্যথা চলে গেল।
কিন্তু এই সমাধানটি স্থায়ী হয়নি—প্রতি মাসেই সেই ভয়ঙ্কর মাথাব্যথা ফিরে ফিরে আসত। কয়েক মাস পর আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে মরফিনের একটি ইঞ্জেকশন দিলেন এবং কিছু ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠালেন। পুরো বিকেল ঘুমিয়ে কাটানোর পর আমার বেশ ভালো লাগলো। তাই পরের দিন আবার সেই ওষুধ খেলাম। তখন মনে হলো, এই ওষুধ আমার মস্তিষ্কে যেন একটি সুইচ অন করে দিল: ওষুধটা খেলেই আমার একটা ভালো অনুভূতি দেয় এবং ব্যথা দূর করে। আর কী চাই?

পরবর্তী এক-দুই বছরে যখনই মনে হতো যে আমার মাথাব্যথা হতে পারে, আমি ওষুধ খেয়ে ফেলতাম। এরপর এক সময় যখন ঘুম আসত না, কিংবা কোন কারণে যখন উদ্বিগ্ন লাগত, বা কোনো ধরণের অস্বস্তি হলেই ঐ ওষুধটা খেয়ে ফেলতাম। পেছনে ফিরে তাকিয়ে এখন বুঝতে পারি, আমি আসক্ত হয়ে পড়ছিলাম এবং ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছিলাম, কিন্তু তখন আমি একেবারেই তা বুঝতে পারিনি।

প্রায় এক বছর এরকম চলার পর, একজন ফার্মাসিস্ট আমাকে প্রশ্ন করলেন কেন আমি এত ঘন ঘন প্রেসক্রিপশন লেখাতে আসি। সেই মুহূর্তে আমার সামনে দুটি পথ ছিল। আমি তাঁর কথাটাকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে নিয়ে থেমে যেতে পারতাম। অথবা ঐ পথেই চলতে থাকতাম। দুর্ভাগ্যবশত, আমি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিয়েছিলাম। তাই তিনি আমাকে ওষুধ দিয়ে দিলেন।

এরপর থেকে, আমি যত বেশি সম্ভব ওষুধ সংগ্রহ করার কৌশল বের করতে শুরু করলাম। আমি বিভিন্ন ফার্মেসি এবং ডাক্তারের কাছে যেতাম। তখনকার সময়ে মেডিকেল সিস্টেম ইলেকট্রনিকভাবে সংযুক্ত ছিল না, তাই একাধিক প্রেসক্রিপশন লিখিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল। আমি দুই-তিনজন ডাক্তারের কাছে যেতাম এবং নগদ টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতাম যাতে বীমা কোম্পানি বুঝতে না পারে আমি কয়টা ওষুধ ব্যবহার করছি।

সামাজিকভাবে আমাকে একজন ভালো ছেলে হিসেবে দেখা হতো। আমি সদ্য একটি খ্রিস্টান কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছি এবং অল্প বয়সেই বিয়ে করেছি। যে ডাক্তার আমাকে সবচেয়ে বেশি ওষুধ দিতেন, তাঁর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি আমাকে ওষুধের অনেক ডোজ লিখে দিয়েছিলেন বলেই হয়তোতাঁকে আমি খুব ভালোবাসতাম। তিনি বলেছিলেন, “তোমার কোনো আসক্তির প্রবণতা নেই, তাই তোমাকে নিয়ে আমার কোন ভয় নেই।”

আমি বুঝতে পারছিলাম যে কোথাও কোন একটা সমস্যা হচ্ছে। আমি জানতাম আমি ডাক্তারদের কাছে মিথ্যা বলছি, ফার্মাসিস্টদের কাছে মিথ্যা বলছি এবং আমার স্ত্রীর কাছেও মিথ্যা বলছি। কিন্তু আমি এটাও জানতাম যে ওষুধটা না নিলেই আমি অসহ্য শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করতাম। তাই আমার কাছে সবসময় ওষুধ রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

পরবর্তী কয়েক বছর ধরে আমি প্রায় প্রতিদিনই ওষুধ নিতাম। আমি সবসময় দিন গুনতাম কখন আবার প্রেসক্রিপশন লিখিয়ে নেওয়া যাবে । ধীরে ধীরে, ওষুধ আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হয়ে উঠল। আমি কাজে যেতাম না কারণ আমার কাছে ওষুধ থাকত না। আর যখন ওষুধ পেতাম, তখন আমি আগের সেই প্রাণবন্ত মানুষ হয়ে উঠতাম। আমি নিজেকে বলতাম, “যে মানুষটি মিথ্যা বলছে এবং কাঠখড় পুড়িয়ে ওষুধ জোগাড় করছে —ওটা আসলে আমি নই।ওটা অন্য কেউ। আমি শুধু যা করতে হবে, তা-ই করছি।

ততদিনে আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে আমি আসক্ত। কিন্তু খুব কম লোকই তা নিয়ে প্রশ্ন করত। আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে সন্দেহ করতেন, কিন্তু তিনিও আমাকে ব্যথায় কাতর হতে দেখেছেন। যেহেতু আমি একজন খ্রিস্টান স্কুলের শিক্ষক, কোচ, এবং যুব পাদ্রী ছিলাম, কেউ আমার ব্যাপারে খারাপ কিছু ভাবতে চাইত না। তারা আমার মিথ্যা কথাও মন দিয়ে শুনত।

কয়েক বছর পর, বাজারে ট্রামাডল (বা আলট্রাম)নামে একটা ওষুধ আসল। এর আগে আমি ভিকোডিন খেতাম, আর ট্রামাডলকে এমন একটি বিকল্প হিসেবে প্রচার করা হচ্ছিল যা আসক্তি সৃষ্টি করে না। কিন্তু আমার এক মিষ্টি স্বভাবের বয়স্ক ডাক্তারের সাথে পরিচয় হয়েছিল। সেই ডাক্তার প্রায়ই অনেক স্যাম্পল ওষুধ হাতে রাখতেন। একদিন তিনি আমাকে প্রায় ৫০টি পিল দিয়ে দিলেন, বিনামূল্যে। ওষুধটি একদম নিখুঁত ছিল: এটি ভিকোডিনের মতো উচ্চমাত্রার অনুভূতি সৃষ্টি করত না, ফলে কেউ বুঝতে পারত না।

এক বছরের মধ্যেই, আমি পুরোপুরি ট্রামাডলের উপর আসক্ত হয়ে গেলাম। একদিনও ট্রামাডল ছাড়া থাকতে পারতাম না। প্রতি ছয় মাস পর পর আমার সব মিথ্যা উন্মোচিত হয়ে যেত। আমার স্ত্রী জানতো যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণের বেশি পিল খাওয়া আমার উচিত নয়, কিন্তু আমি সবসময় বলতাম যে আমি ঠিক পরিমাণের মধ্যেই আছি। তবে ঝামেলা হয়ে যেত যখন কিছুদিন পর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যেত, অথবা কোনো ডাক্তার আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য বাড়িতে ফোন করত, অথবা কোনো ফার্মেসি ফোন করে বলত আমার প্রেসক্রিপশন তৈরি হয়ে গেছে। এসব ঘটনা ঘটলে আমি কাঁদতাম, স্বীকার করতাম এবং বলতাম আমি আর কখনও এমন করব না। আমি এক-দুই সপ্তাহ ঠিক থাকতাম, তারপর কিছু চাপের মধ্যে পড়লে আবার ওষুধ খাওয়া শুরু করতাম।

এ সময় আমি এবং আমার স্ত্রী ওয়াশিংটনে চলে গেলাম, কারণ আমি আবার স্কুলে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যেই আমি একজন নতুন ডাক্তার পেয়ে গেলাম; নতুন জায়গায় আসার ফলে নতুন লোকজনের সাথে ওষুধ কেনার যাবতীয় প্রক্রিয়া নতুনভাবে শুরু করা সহজ হয়ে গেল। তার ওপর, আমি ট্রাভেলিং সেলসম্যানের একটা চাকরি পেলাম, যা আমাকে নতুন নতুন ড্রপ-ইন ক্লিনিকে নতুন ডাক্তারের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই স্বভাবের কারণেই আমার চাকরি চলে গেলো। আমি প্রায়ই আমার সেলসের কাজ বাদ দিয়ে ওষুধ জোগাড় করার জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের অফিসে পড়ে থাকতাম।
এরপর, আবারও আমার স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে গেলাম। আমি ৭০০ ডলারের একটি পে-ডে লোন নেয়ার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। এইবার আমি প্রথমবারের মতো রিহ্যাবে যাওয়ার জন্য রাজি হলাম। সত্যি বলতে কি, আমি স্বস্তি পেয়েছিলাম। রিহ্যাবে গেলে আর আমাকে মিথ্যা লুকাতে হবে না। আমি সবসময় সাহায্য পেতে চাইতাম, এবং আমি আসলেই এই অভ্যাস থেকে বেরতে চাইতাম।তবে চাওয়ার মত করে চাইতাম না। আমি ওষুধ ব্যবহার করতে চাইতাম না, কিন্তু আমি তবু ব্যবহার করা চালিয়ে যাচ্ছিলাম কারণ ওষুধ ব্যাবহার করলে আমি একটু স্বাভাবিক থাকতে পারতাম। কিন্তু সেই দিন, আমি পুরো সত্যটি বলিনি। আমি কেবল যতটুকু ধরা পড়েছিল সেটুকুই স্বীকার করেছিলাম। আমার আসক্তি কতটা গভীর ছিল তা গোপন রাখার চেষ্টা করছিলাম।

আমার স্ত্রী এবং আমি দুজনই ভেবেছিলাম যে পুনর্বাসনে গেলে আমি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাব। এই মানসিকতাটা শুরু থেকেই আমাকে সমস্যায় ফেলেছিল। আমই ভাবতাম যে, তুমি অসুস্থ, ডাক্তার দেখাও, তারা তোমাকে সুস্থ করে তুলবে।

পুনর্বাসনে থাকার সময়, আমার মিথ্যাচার আর সব বিলের আসল চেহারা আস্তে আস্তে প্রকাশ পেতে শুরু করলো। রিহ্যাবে থাকায় আমার স্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক পরিস্থিতি আর আড়াল করতে পারিনি। কিন্তু এর আগে আমি বছরের পর বছর ধরে এগুলো তার কাছ থেকে আড়াল করে রেকেহছহিলাম। পুনর্বাসন থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে সেইসব আর্থিক লেনদেনের জন্য জবাবদিহি করতে হল। ফলে চাপ সামলানোর জন্য আমি আবার মাদক নিতে শুরু করলাম। শুরুতে সামান্য পরিমাণে নিচ্ছিলাম। নিজেকে বলতাম যে “আমি শুধু দিনটা পার করতে একটা ওষুধ খাচ্ছি। " কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে আমি আবার পুনর্বাসনের আগে যতটা খেতাম ঠিক ততটাই খেতে শুরু করলাম: প্রতিদিন ২০-৩০টি পিল।
ওষুধ খাওয়ার সময়, আমি কিছু লজ্জাজনক কাজ করেছি। একবার আমি আমার চারটি শিশুসন্তানকে একা বাসায় রেখে বেরিয়ে এসেছিলাম। আমি আমার বাবা-মায়ের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ওষুধ কিনেছিলাম। এমনকি আমি আমার বিয়ের আংটিও বন্ধক রেখেছিলাম।
যদিও আমার লজ্জা লাগত, তবু সেইটুকু লজ্জা আমার আচরণ পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নিজেকে ভালো রাখা। আর ভালো থাকার একমাত্র উপায় ছিল একটি ওষুধ খাওয়া। এভাবে একটি চক্র শুরু হলো: আমি ভালো লাগানোর জন্য একটি ওষুধ খেতাম, কিন্তু ওষুধের প্রভাব শেষ হয়ে গেলে আরও খারাপ লাগত, কারণ তখন আমার অপরাধবোধ এবং লজ্জা বাড়ত। সেই লজ্জা কাটানোর জন্য আমি আরেকটি ওষুধ খেতাম। এভাবে চক্রটি চলতে থাকত।

খারাপ সেলসম্যান হওয়ার জন্য চাকরি হারানোর পর, আমি একটি গির্জার ক্যাম্পে পরিচালক হিসেবে চাকরি পেলাম। এটি আমার স্বপ্নের চাকরি ছিল। কাজ পাওয়ার পর, আমি সবার কাছে আমার গল্পের কিছু অংশ বলেছিলাম, কিন্তু অনেক বড় অংশ গোপন রেখেছিলাম এবং আমার সমস্যাকে ছোট করে দেখিয়েছিলাম। প্রথম দিকে আমি বেশ ভালো ছিলাম; খুব কম ওষুধ নিতাম। কিন্তু পরে আমি নিজেকে চাপের মধ্যে ফেলে একঘরে করে ফেললাম। আমার বন্ধুরা ছিল, কিন্তু কেউই আমাকে ভালো করে চিনত না। তাই আমি চাপ সামলানোর জন্য আবার ওষুধ খেতে শুরু করলাম।

আমি জানতাম কিছু একটা ভুল হচ্ছে। আমি জানতাম আমি ডাক্তারদের কাছে মিথ্যা বলছি, ফার্মাসিস্টদের কাছে মিথ্যা বলছি, এবং আমার স্ত্রীকেও মিথ্যা বলছি। কিন্তু আমি এটাও জানতাম, ওষুধ না খেলে, আমার আরও ভয়ংকর অনুভূতি হত।

তিন বছর ওই চাকরিতে থাকার পর, আমি অনলাইনে ওষুধ কিনতে শুরু করলাম। তারপর ধরা পড়লাম। এটি ছিল জনসম্মুখে হওয়া খুবই লজ্জাজনক এবং বিব্রতকর ব্যর্থতা। কিন্তু তখন আর কিছু লুকানোর কিছু ছিল না। পুরো সত্য তখন প্রকাশ পেয়ে গেলো।

ফলে, আমি চাকরি হারালাম। সেই মুহূর্তটি ছিল আমার জীবনের মোড় বদলের সময়। আমি যদি বলতে পারতাম যে সাহস করে নিজের দোষ সবার কাছে স্বীকার করতে পেরেছিলাম, তাহলে ভালো লাগতো । কিন্তু আমার সত্যিটা আমই নিজে শেয়ার করতে পারি নি। অন্যরা আমার কথা বলাবলি করার ফলে সবাই আমার সত্যিটা জেনে গিয়েছিল। ার জানাজানি হওয়ার ফলে আমি সঠিক পথে আসতে বাধ্য হলাম।

এরপর আমাকে পরিণতির মুখোমুখি হতে হলো। আমার ছোট ছোট ছেলেরা একটি ক্যাম্পে বড় হচ্ছিল। সেখানে তারা মোটরসাইকেল চালাতে, পেইন্টবল খেলতে, ক্যানো বোটে চড়তে এবং স্কেট পার্কে যেতে পারত। আমাকে তাদের দিকে তাকিয়ে বলতে হলো, “বাবা চাকরি হারিয়েছে কারণ তোমাদের বাবা একজন মাদকাসক্ত মানুষ।” চার বছরের একটি শিশু এত কথা বোঝে না। চার বছরের শিশুর একটাই জিজ্ঞাসা: “তুমি কি একবার ক্ষমা চেয়ে বলতে পারো না না যে তুমি এই কাজ আর করবে না?”

আমাকে আমার স্ত্রীর মুখোমুখিও হতে হলো। আমি বললাম, " তোমার মনে আঁচছে যে একটা সময় আমাদের মনে হচ্ছিলো যে সব ঠিক হয়ে গেছে? আসলে কিচ্ছুই ঠিক হয় নি কারণ আমি এখনও মাদক নিচ্ছি, এবং এজন্য আমার চাকরি চলে গেছে।” যদিও সে খুব রেগে ছিল, তবুওতার কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। আমি ভেবেছিলাম অবশ্যই সে আমাকে ছেড়ে যাবে, এবং যদি সে ছেড়ে যেতোই, তবে আমি তাকে দোষ দিতাম না।

আমাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিল না। ক্যাম্পে আমাদের আরও এক মাস থাকতে দেওয়া হয়েছিল, এবং মাদক ত্যাগ করার কারণে আমি এতটাই দুর্বল ছিলাম যে বাড়ির জিনিসপত্র গুছাতেও পারিনি। শুধু তাই নয়, সারাক্ষণ কেউ না কেউ আমার দেখাশোনা করত— সত্যি বলতে কি আমাকে সারাক্ষণ নজরদারির মধ্যে রাখা হত । আমাকে বিশ্বাস করা যেত আমার মনে আছে, আমই সে সময় সবসময় ভাবতাম, আমি আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে দেখবো। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করব। পাঁচ মিনিট শেষ হলে আমি ওষুধ পাওয়ার উপায় ঠিকই খুঁজে বের করব। তারপর পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেলে ভাবতাম, আরও পাঁচ মিনিট এভাবে কাটাতে পারব। এভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ চলল।

শারীরিক নির্ভরতা শেষ পর্যন্ত ভাঙল, এবং আমি একটু একটু করে কাজ করতে শুরু করলাম। আমরা ছয়জন ক্যাম্প থেকে আমার বাবা-মায়ের দুই-শোয়ার ঘর বিশিষ্ট কন্ডোতে চলে এলাম। আশ্চর্য ব্যাপার হল, চাকরি হারানোর এক মাসের মধ্যেই আমি ১৩ ডলারের ঘণ্টাপ্রতি বেতনে একটি স্থানীয় অলাভজনক সংস্থায় চাকরি পেলাম। এটি এমন একটি চাকরি ছিল যেখানে আমাকে সময়মতো আসা-যাওয়া করতে হতো, এবং আমাকে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসা হতো।

প্রথম বছরে, অর্ধেক সময় আমি স্নায়ুচাপের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছি এবং আমি খুব ঘামতাম, কারণ আমি তখনও ওষুধ ত্যাগ করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি প্রায় কোনকিছুতেই মনোযোগ দিতে পারতাম না। কিন্তু তবুও সবকিছু ঠিক হয়ে গেলো। প্রতি ছয় মাসে আমার প্রমোশন হতে থাকল। চাকরি ছেড়ে আসার সময়ে, আমি শীর্ষস্থানীয় ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলাম।

সুস্থ হওয়ার পরে প্রথম কয়েক মাসে আমি ভেবেছিলাম যে জীবনে আর কখনও আনন্দ করতে পারব না। সব কিছু বিবর্ণ লাগত, আমার কোনো অনুভূতি কাজ করত না। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হলো; যেগুলো আগে আনন্দদায়ক ছিল, সেগুলো আবার আনন্দদায়ক হয়ে উঠল।

এখন আর সেই তীব্র তাড়না অনুভব করি না , কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে অস্বস্তি থেকে পালানোর সহজ উপায় খুঁজি। আমি এখনও মিটিংয়ে যাই। কিন্তু গত আট বছর ধরে আমি সুস্থ জীবনযাপন করছি। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, আমার আর মাইগ্রেন হয় না।

আমার গল্প অন্যান্য আসক্তদের থেকে কিছুটা আলাদা কারণ আমার সাথে আমার পরিবার এবং ভালোবাসার মানুষদের সমর্থন ছিল। যখন আমি সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিলাম, তখনও আমি সব সম্পর্ক নষ্ট করিনি। কিন্তু পেছনে তাকালে, আমি দেখতে পাই যে আমি সবাইকে এবং সবকিছু হারানোর থেকে মাত্র কয়েক ধাপ দূরে ছিলাম।

আপনার যদি এই মুহূর্তে কোন সহায়তা লাগে তাহলে, আমাদের একজন অনলাইন মেন্টর আপনার সঙ্গে এই পথে হাঁটার জন্য প্রস্তুত। আপনার যদি আসক্তি থাকে, তাহলে নিজেকে একা ভাববেন না। নিচে আপনার তথ্য দিন, এবং আমাদের টিমের কেউ আপনাকে শিগগিরই যোগাযোগ করবে।

আপনাকে একা এই পথ পাড়ি দিতে হবে না। নিচের ফর্মটি পূরণ করুন, এবং আমাদের একজন মেন্টর যত দ্রুত সম্ভব আপনাকে উত্তর দেবে। এটি গোপনীয় এবং সবসময় বিনামূল্যে এই সেবাটি প্রদান করা হয়। আমাদের মেন্টররা পেশাদার পরামর্শদাতা নন। তারা সাধারণ মানুষ যারা সহানুভূতি ও সম্মানের সঙ্গে অন্যের যাত্রায় অংশ নিতে ইচ্ছুক।


আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.