বিষন্নতাকে আপন করে নেয়া
আমি যেমন মনে করেছিলাম বিষন্নতা তার চেয়ে অনেক বেশি সাধারণ ঘটনা। আমাদের মন্ডলির পুরুষদের সকালের নাস্তায় একবার অংশগ্রহনের কথা আমার মনে পড়ে। আমার টেবিলে বসে ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষই বিষন্নতায় ভোগার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু এসব কথা খুব কমই বলা হয়।
আমি বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাবার জন্য অনেক কিছু করেছি - ঘুমান, উপবাস, প্রার্থনা, বন্ধুদের সাথে কথা বলা, প্রেরণামূলক আলোচনা ও উপদেশ শোনা। আমি একজন পরামর্শকের কাছে যেতাম। আমার লক্ষ্য ছিল বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া যেন আমি আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারি। 'গড ইন দ্য ডার্ক' বইটিতে লেখিকা লুসি শ' লিখেছেন, "অসুস্থদের প্রতি সুস্থতার বিষয়ে একটি সাধারণ ভুল ব্যাখ্যা হল সুস্থ থাকা ইচ্ছা এবং সিদ্ধান্তের ব্যাপার"। আমি চাইছিলাম বিষন্ন না হতে, কিন্তু সেটা আমার হাতে ছিল না।
##বিষন্নতার উপহার
কোন এক শীতের সময়ে আমার পরামর্শদাতা আমাকে লেখক পার্কার পালমারের লেখা 'লেট ইয়োর লাইফ স্পিক' নামের একটি বই পড়তে বলেন। এই বইতে পালমার প্রশ্ন করেন, "কেমন হয় যদি আপনি বিষন্নতাকে শত্রু যে আপনাকে কষ্ট দেয়, সে হিসাবে না দেখে বন্ধু হিসাবে দেখেন যে আপনার জীবনে উপহার নিয়ে আসে?" এটি বিষন্নতার প্রতি আমার চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল।
বিষন্নতাকে একজন শত্রু না ভেবে বন্ধু ভাবা, একজন অনুপ্রবেশকারী না ভেবে একজন অতিথি ভাবা, এগুলো আমাকে আমার বিষন্নতাগুলো আপন করে নিতে এবং যে উপহারগুলো সে আমার জীবনে নিয়ে এসেছিল তা বুঝতে সাহায্য করেছিল।
-
বিষন্নতা আমাকে এই চিন্তা থেকে মুক্ত করেছিল যে আমি সৃজনশীল বলেই আমি মূল্যবান। যখন আমি বিষন্ন থাকতাম আমার কাজের সৃষ্টিশীলতা অনেক কমে যেত, এটা আমার জন্য অনেক বড় সংগ্রাম ছিল। এর জন্য আমার নিজেকে দোষী মনে হত কারণ আমার মূল্য আমার সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করত। আমি নিষ্ফল হবার দুশ্চিন্তা নিয়ে সংগ্রাম করতাম এবং বিশ্বাস করতাম যে ঈশ্বর আমাকে বলেছেন আমাকে নিঃস্বার্থভাবেই ভালবাসা ও মূল্য দেয়া হয়েছে। এমন একটি জগতে আমি এই মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছি যেখানে আমাদেরকে প্রায়ই বলা হয় যেমন ফল আমরা দিব তেমনই মূল্য আমরা পাব।
-
বিষন্নতা আমাকে আরও খাঁটি এবং তুচ্ছ হতে সাহায্য করেছিল। আমি যতদূর মনে করতে পারি, লোকেরা আমাকে যেমন মনে করত সেখান থেকে আমি অনেক মূল্য ও যোগ্যতা অর্জন করেছিলাম। যখন আমি বিষন্ন হয়ে গেলাম, আমি সাহায্য চাইবার জন্য লোকদের কাছে ছুটে যেতে বাধ্য হলাম। আমি তাদেরকে আমার অন্ধকার দিকটা দেখাব বলে ঠিক করলাম এবং আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমি দূর্বল হওয়ার পরেও তারা আমাকে গ্রহণ করল এবং আমি তাদের ভালবাসা পেয়েছিলাম।
-
বিষন্নতা আমাকে নিজের উপরে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে। আমি একজন চিন্তাবিদ, আমি প্রতিটি সিদ্ধান্ত সমস্ত দিক থেকে চিন্তা করতে পছন্দ করি। এর জন্যে আমি প্রায়ই ধাঁধায় পড়ে যাই এবং একই চক্রে ঘুরতে থাকি, বিশেষ করে জীবনের বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে। আমি আবিষ্কার করলাম যে, আমার বিষন্নতাকে উসকে দেয়ার একটি বড় বিষয় হল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হবার ভয়। ঈশ্বর আমাকে শিখিয়েছেন যে, কোন যুক্তি বোঝা ছাড়াই নিজের ক্ষমতা, নিজের মন, এবং পবিত্র আত্মার উদ্দীপনার উপর বিশ্বাস রাখা যায়।
-
বিষন্নতা আমার মধ্যে নম্রতা বৃদ্ধি করেছে। আমার বিষন্নতার সময়গুলো অনেক কঠিন ছিল। আমি নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো বুঝতে পারছিলাম এবং সেগুলো গ্রহণ করতে শিখেছিলাম। বিষন্নতাই আমাকে অন্যের কঠিন সময়ে তাদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল করে তুলতে সাহায্য করেছে।
-
বিষন্নতা আমাকে খারাপ সময়ে ঈশ্বরের উদারতা দেখিয়েছে। আমার প্রায়ই মনে হত ঈশ্বর এখন কোথায় এবং কেন এমন হচ্ছে কিন্তু বিষন্নতা কেটে যাবার পর আমি দেখতে পেতাম এই খারাপ সময়গুলোতে ঈশ্বর আমাকে ভাল কি কি দিয়েছেন। আমি স্বীকার করি যে আমি এখনও বিষন্নতার (অথবা খারাপ সময়ের) মধ্য দিয়ে যেতে ভয় পাই। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের জীবনে এই অন্ধকার সময়ে কতটা মঙ্গল আনতে পারেন এটা ভাবলে আসন্ন দুর্ভোগের ভয় কিছুটা হলেও কমে যায়।
-
বিষন্নতা আমাকে আরও গভীরভাবে আবিষ্কার করতে এবং আমার বিষন্নতার শিকড়গুলি উদঘাটন করতে উৎসাহিত করেছে, যা আমার নিজেকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। প্রথম কয়েকবার যখন আমি বিষন্নতায় ভুগতাম, আমি কি করব বোঝার মত পরিপক্ক ছিলাম না, তাই আমি একাই বেশিরভাগ সময়ে কষ্ট করতাম। বিষন্নতায় ভোগার চতুর্থবারে গিয়ে আমি একজন পরামর্শকারীর কাছে সাহায্য পাবার জন্য যেতে শুরু করলাম। এই প্রক্রিয়াটি আমার জন্য অনেক উপকারী ছিল, বিষন্নতাগুলো এক সময়ে চলে যাবে এবং আর ফিরে আসবে না এই চিন্তার বদলে আমি বিষন্নতার আরও গভীরে যেতে শুরু করি। বিষন্নতা আমার জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনেছিল।
##বিষন্ন বন্ধুকে সাহায্য করা
যখন আমি বিষন্ন ছিলাম, অনেকেই আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন। বেশির ভাগ মানুষই আমাকে উপদেশ দিতেন কিভাবে আরও ‘ভাল থাকা’ বা ‘ভাল বোধ’ করা যায়। কখনও কখনও আমি তাদের উদ্বেগের জন্য খুশি হতাম, কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই আমি আরও হতাশ হয়ে পড়তাম কারণ তারা যা বলেছিল তার সবগুলোই আমি চেষ্টা করে ফেলেছি (যত উপদেশ আমি পেয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ উপদেশ ছিল, বিষন্ন হয়ো না, আমার সেই লোকের মুখে ঘুষি মারতে মন চাইছিল)। পেছনে ফিরে তাকালে আমি একটা বিষয় বুঝি, যারা আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল তারা জানত না কিভাবে সাহায্য করতে হয়।
আপনি যদি আপনার কোন বন্ধু বা পরিবারের কাউকে সাহায্য করতে চান যে বিষন্নতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাহলে এখানে আমার কিছু পরামর্শ থাকল:
- সহজেই উপদেশ দিবেন না। দ্রুত পরামর্শ দিলে মনে হয় সমাধান খুবই সহজ এবং সে যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটাকে হালকা করে দেখা হচ্ছে। আমি নিজেও এই ভুল অনেক বার করেছি।
- শুনুন এবং তাদের অনুভূতিগুলোকে সমর্থন করুন। আমি যখন বিষন্ন ছিলাম তখন আমার স্ত্রী সবচেয়ে ভাল যে কাজটি করেছিল সেটি হল মন দিয়ে শোনা। কখনও কখনও আমার নিজেকে ভাঙ্গা রেকর্ডারের মত মনে হত কারণ আমি একটাই বিষয়ে কথা বলতাম যে আমার কতটা খারাপ লাগত। যখন অলিভ আমার কথা শুনত, আমার তখন মনে হত আমার অনুভূতিগুলো যৌক্তিক এবং এভাবে চিন্তা করছি বলে আমি পাগল কিন্তু নই।
- তাদের সঙ্গে অপেক্ষা করুন। মানসিক স্বাস্থ্যবিধি বিশেষজ্ঞ ড. শ্যারন স্মিথ বলেন যে বিষন্ন কাউকে সাহায্য করার সবচেয়ে ভাল উপায় হল তাদের সঙ্গে অপেক্ষা করা। এটা যেন তাদের সাথে অন্ধকারে বসে অপেক্ষা করা, সূর্য ওঠার একটি অপেক্ষার মত।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।