মৃতপ্রায় বিবাহিত জীবনের হাতকড়া

বিবাহিত জীবনে আমি একা হয়ে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী আমার অনূভুতিগুলো কিভাবে শুনবে বা কীভাবে আমাকে সহায়তা করবে তা জানতো না। সাত বছরের সর্ম্পক এবং তের বছরের সংসার জীবনের পর আমরা একে অপরের কাছে অচেনা হয়ে গেলাম। পারস্পরিক বোঝাপড়া ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলো এবং আমাদের মধ্যে বন্ধনের লেশমাত্র থাকলো না।

আমি চাইছিলাম যেন সে আমার মনের কথা শোনে, আমি কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটা শোনে এবং আমার অনূভুতিকে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু সে এমনটা চাচ্ছিলো না। সে ঘরের বাইরে সবার জন্য “ভালো বন্ধু” ছিলো, কিন্তু অনেক বছর ধরেই আমি উপলব্ধি করছিলাম যে, আমি যেন সব কিছুতে তার তালিকায় দু’নম্বরে ছিলাম। আমি মনে মনে ভাবতাম, সে যদি আমারও বন্ধু হতো! যখন আমি তাকে জানাতাম আমার কেমন লাগে, সে এমন ভাবে বিষয়গুলো উড়িয়ে দিতো যেন এসব কিছু্ না। আমরা এক ছাদের নীচে বাস করেও একে অপরের সাথে তেমন একটা কথা না বলা অচেনা মানুষ হয়ে গেলাম। মাঝে মাঝে আমাদের কথা হতো, যার বেশির ভাগই বাকবিতণ্ডায় গিয়ে ঠেকতো। আমরা ভিন্ন কামরায় ঘুমাতে যেতাম কারণ সে আমার কাছে থাকতে চাইতোনা।

যখন আমার স্বামী আমার সাথে ছিলো, তখন সে কখনোই আমার বা আমাদের মেয়ের জন্য ছিলো না। সে আসলে অনেক আগেই মন থেকে সরে গিয়েছিলো যেটা আমি মেনে নিতে পারিনি। সে বাসার বাইরে এতটাই সময় কাটাতো যে আমি একাই মেয়েটাকে মানুষ করছিলাম। মানুষজন তাকে ভালোবাসতো, তাকে নিজেদের আদর্শ পুরুষ মনে করতো এবং তার সাহায্য চাইতো। কিন্তু এটাই তাকে তার পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। সে শুধু আমাদের জন্য একজন দাতা ছিলো যে আমাদের প্রয়োজন মেটাতো, কিন্তু আমাদের মেয়ের একজন সহ-অভিভাবক হিসাবে তাকে আমার প্রয়োজন ছিলো।

আমার স্বামী মদ্যপ এবং কাজ-পাগল ছিলেন। দিন শুরু করার জন্য রোজই তার মদ্যপানের প্রয়োজন হতো এবং সে মদের কার্টন দিয়ে কামরা বোঝাই করে ফেলেছিলো। এমনকি সে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করতো। যখন আমি তার ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকতাম, তখনও সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো অথবা বন্ধুদেরকে সময় দিতো। যখন সে ঘরে ফিরতো, তখনও আমাকে সময় না দিয়ে সে মদপান করতে বসতো এবং প্রায় ভোর পর্যন্ত ফোনালাপ করতো। আমরা একসাথে খেতেও বসতাম না। অনেকদিন এমন হয়েছে যে, রাত একটায় ঘরে ফিরে সে আমাকে বলেছে যে সে খেয়ে নিয়েছে এবং আমি যেন তার জন্য অপেক্ষা না করি।

আমি আশ্চর্য হয়ে জানতে পারি যে আমাদের বিয়ের এই কয়েক বছরেই সে কাউকে পেয়ে গিয়েছে।

সে আমাকে বলতো যে, মানসিক এবং শারীরিক ভাবে আমাকে তার আর ভালো লাগছিলো না কিন্তু তার কথা তেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো না। আমি আশ্চর্য হয়ে জানতে পারি যে আমাদের বিয়ের এই কয়েক বছরেই সে কাউকে পেয়ে গিয়েছে। আমি জোর করে নিজেকে অন্ধের মতো করে রেখে তার সাথে সংসার করতে থাকি, এটা জেনেও যে সে মানসিক এবং শারীরিকভাবে অন্য একজনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে। আমি চাইনি সে আমাকে ছেড়ে চলে যাক। আমাকে সে একেবারে ছেড়ে দিবে এই ভয়ে আমি সবসময়েই ছিলাম।

যখন এটি সামনে চলেই আসলো আমি তখন নিজে থেকেই একা থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম কারণ তাকে দেবার মতো আমার কাছে আর কিছু ছিলো না। আমি আমার মন এবং আমাদের সর্ম্পক এই দুটোর সাথেই যুদ্ধ করছিলাম। যখনই আমি তার ব্যবহার নিয়ে কথা বলতাম, আমাদের মধ্যে ঝগড়া হতো এবং সে মদপান করা শুরু করতো। আমি মনোচিকিৎসকের শরণাপণ্ন হলাম এবং বিষণ্নতারোধক ওষুধ সেবন করা শুরু করলাম। আমার নিজেকে একা, অসুস্থ এবং আশাহত মনে হতে লাগলো।

সে কখনওই আমার অবস্থা জানতো না কারণ হয় সে অন্য কোথাও থাকতো নতুবা ব্যস্ত থাকতো। আমি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছিলাম কারণ এই মৃতপ্রায় সংসারে সে তার অবস্থান দেখতে পাচ্ছিলো না। সে শুধু আমাকেই দোষারোপ করতে লাগলো। যখন আমি তাকে দাম্পত্য কাউন্সেলিং এ আমার সংগে যেতে বলতাম তখন সে সাফ মানা করে দিতো। যেহেতু আমি একাই মনোচিকিৎসকের কাছে যেতাম, সে তার পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবকে বলতে লাগলো যে, আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ।

অনেক বছর ধরে আমি নিজেকে নিজের মাঝে বন্দী করে রেখেছিলাম।

কিন্তু আমি নিজের জন্য, শুধুমাত্র নিজের জন্য কাজ করে বিষণ্নতা থেকে বেরিয়ে আসি। যারা আমাকে আমার মতো করে আপন করে নিয়েছিলো আমি তাদের কাছে গেলাম। আমি এমন সম্প্রদায়ে মেশা শুরু করলাম যারা আমাকে এই মৃত বৈবাহিক সর্ম্পকের হাতকড়া ভাঙতে সাহায্য করলো যেখানে কিনা বলা হতো দোষ কেবল আমারই। আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার উচিত ঈশ্বরের কাছে ফেরা এবং তাঁর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গ্রহণ করা, যেটা আমার জন্য দরকারী ছিলো।

বছরের পর বছর আমি নিজেকে আটকে রেখেছিলাম, আমার মনের ক্ষত কাউকে দেখাইনি এবং নিজেকেও নতুন করে গড়ে ওঠার সুযোগ দেইনি। আমি সমস্ত বোঝা একাই বহন করছিলাম। এই মৃত সর্ম্পককে ছেড়ে দিয়ে আমি নিজের ক্ষত সারিয়ে তুলেছি এবং নতুন করে বাঁচতে শিখেছি।

আমি অনুভব করতে পারছি যে আমি আস্তে আস্তে সেরে উঠছি। আমার সাথে যা কিছু হয়েছে তা আমাকে আগের চেয়েও অনেক বেশী শক্তিশালী করে তুলেছে। আমি জীবনে অনেক রঙ দেখেছি - কিছু উষ্ণ আবার কিছু হিমশীতল। জীবনের ক্যানভাসে আমি যা কিছু এঁকেছি তা আমাকে আজকের আমি করে তুলেছে। এখন আমি বিশ্বাস করি আমার সাথে যা-ই হয়েছে, তার পেছনে কারণ ছিলো।

আজ যদি আপনার নিজেকে পরিত্যাজ্য মনে হয়, আমি আপনাকে বলতে চাই যে, এই কষ্ট আপনার একা বহন করার কোনো প্রয়োজন নেই। বাইরে বেরিয়ে এই কথাগুলো জানানো আমার এই যাত্রার অনেক বড় একটা অংশ ছিলো। আপনি যদি আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস এবং নাম নীচে দিয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের একজন পরামর্শদাতা, আপনার তথ্য গোপন রেখে বিনামূল্যে আপনার কথা শুনবেন এবং আপনাকে সহায়তা করবেন। আপনি আপনার আসল নাম অথবা ছদ্মনাম যে কোনোটিই ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার একান্ত ব্যক্তিগত পছন্দ।

#####লেখকের নাম গোপনার্থে বদল করা হয়েছে

ছবি স্বত্ব ক্লেম ওনোজেগুয়ো

আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.