ক্ষমা কোন আবেগীয় অনুভূতির বিষয় না
দুর্বলরা কখনোই ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা হচ্ছে শক্তিশালীদের গুণ। মহাত্মা গান্ধী
একটি সুখী বিবাহিত বা ব্যক্তিগত জীবন গড়ে তুলবার জন্য ক্ষমা করতে শেখা অত্যন্ত জরুরী। বিয়ের প্রথম বছরে ভুল বোঝাবুঝির জায়গাটা এতো "ছোট" থাকে যে ক্ষমা করবার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায় না। কিন্তু আমরা যদি এই “ছোট ছোট“ কষ্টগুলোকে ক্ষমা না করে অবহেলা করি এবং ভাবি যে বিবাহিত জীবনটা এভাবেই ছোট ছোট কষ্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তবে ভূল করব। বিয়ের প্রথম বছরটায় একে অপরকে ক্ষমা করতে শেখার বিশাল সম্ভাবনা রয়ে যায়। ক্ষমা একটি অনুভূতি মাত্র- এটা ভাবা সহজ কিন্তু ধারণাটি আসলে সঠিক না। তাই চলুন আমরা দেখি, ক্ষমা প্রকৃতপক্ষে কি?
গ্যারি চ্যাপম্যানের মতে, "আমরা যখন কারও কারনে খুব কষ্ট পাই তখন তার বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি না করে তাকে সময় বা সুযোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়াই ক্ষমা"।
ক্ষমা বাধাবিঘ্নতা অপসারণ করে এবং শাস্তি তুলে নেয়। এর মানে হলো, ক্ষমা এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে আর কখনও সেই ব্যক্তির ব্যর্থতার বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করবে না।। ক্ষমা সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে এবং সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। ক্ষমা একটি শক্তিশালী স্বভাবচরিত্র বা গুণ।
"ক্ষমা ছাড়া কোন ভালবাসা নেই, ভালবাসা ছাড়া কোন ক্ষমা নেই।"
##ক্ষমা করা এত কঠিন কেন?
মানব আচরণ বিশ্লেষন করে দেখা গেছে যে, মানুষকে এমন শক্ত কাঠামো দিয়ে তৈরী করা হয়েছে যে, অন্য কোন ব্যক্তির দ্বারা কষ্ট পেলে সে প্রতিশোধ-পরায়ন হয়ে উঠে। যখন আমাদের অহংকার এবং আত্ম-সম্মানবোধের জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, আমাদের প্রত্যাশা বা স্বপ্ন ভেঙ্গে পড়ে, আমাদের কাছে অতি মূল্যবান তেমন কিছু হারিয়ে যায় এবং হারানোর কষ্টবোধের প্রতিবাদে কিছু ক্ষতিপূরণ আশা করি।
আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে যা আমাদের ক্ষমা করবার প্রেরণাকে বাধা দেয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেসব চিন্তা আমাদের মনে দানা বাঁধে বা যে বিশ্বাসকে আমরা লালন করে ধরে রাখি অনেক ক্ষেত্রে তা অন্যকে ক্ষমা প্রদানে বাধা স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা নিজেরা নিজেদের অনেক সময় বলি, "আমি তাকে ক্ষমা করব না কারণ সে তার কৃতকার্যের দায়ভার কখনও স্বীকার করে না" অথবা "আমি ক্ষমা করতে না চাইলেও যদি ক্ষমা করি তাহলে আমি ভণ্ড" অথবা "ক্ষমা করা কেবল দুর্বল মানুষের কাজ।"
ক্ষমা আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে
ও উদাসীন মানুষ" অথবা "সে আমাকে মূল্যায়ন করে না", অথবা "সে ভেবেচিন্তেই এটা করেছে"। এইসব চিন্তা করেই আমরা অন্যপক্ষের উপর কঠোর হই।
যখন আমরা কোন ভুল বা কষ্টদায়ক কিছু করি, তখন আমরা বাহ্যিক কারণকে দায়ী করে নিজেদের আচরণগত স্বভাবকে ক্ষমা করি। সেক্ষেত্রে আমরা বলি, "আমার বাচ্চাটাই ঝামেলা করেছে", অথবা "রাস্তায় গাড়ি এ্যাক্সিডেন্ট করেছে"। আমরা নিজেদেরকে ঐ ঘটনাগুলো থেকে আলাদা করে ফেলি এবং নিজেকে ব্যর্থতার আড়ালে ঢেকে রাখি।
মনোবিজ্ঞানীরা এই মনোভাবকে বা আচরণকে "মৌলিক স্বভাবগত ভ্রান্তি“ হিসেবে অভিহিত করেন। আমাদের নিজেদের স্বভাবগত আচরণের দ্বায়ভার বা দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দেই এবং আমাদের নিজেদের নেতিবাচক আচরণগুলোকে পরিস্থিতির উপকরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করে নিজেকে আড়াল করে ফেলি। অর্থ্যাৎ আমরা বুঝাই যে, এটা আমাদের দোষ না, কারণ..........। আমাদের আচরণের মাধ্যমে নিজের ভুল বুঝতে পারলেই ও মেনে নিলেই অন্য পক্ষের উপর যে নৈতিক দ্বায়ভার থাকে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। কাউকে ক্ষমা করলেই ভুলের পরিনতিভোগ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না।
আপনার রাগ যেন আপনাকে আজীবনের জন্য বন্দী করে না ফেলে তা লক্ষ্য রাখবেন।এই রাগ আপনাকে এবং আপনার পারিপার্শীক সম্পর্কগুলোকে ধ্বংস করে ফেলবে। আপনার অন্যান্য সম্পর্কগুলোকে ধ্বংস করে ফেলবে। লুইস বি. স্মেডস লিখেছেন যে, “ক্ষমা করা হচ্ছে একজন বন্দীকে মুক্ত করা এবং আবিষ্কার করা যে, আপনিই ছিলেন সেই বন্দী।"
অন্যকে ক্ষমা করা অনেক সহজ হয় যদি কৃত অপরাধের দরূণ সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে ক্ষমা পাবার আনন্দ, অনুভুতি বা উপলব্ধির অভিজ্ঞতা আপনার থাকে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের ক্ষমা করতে সাহায্য করবে, এমন কি যদি সেই ক্ষত অনেক গভীরেও চলে যায়। এডওয়ার্ড লিখেছেন যে, “ত্যাগ-স্বীকার, সহ্য শক্তি, স্থীর ধৈর্য্যধারণ এবং প্রেম- আর এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ক্ষমার মূল রহস্য এবং এর পরিপূর্ণতা“।
##ক্ষমা কি করে না, তা জানাও জরুরী
###ক্ষমা স্মৃতি নষ্ট করে না
যখন মানসিক আঘাত আসে, তখন স্মৃতির পাতায় জড়ানো অতীতের বহু আঘাতের অভিজ্ঞতাও একের পর এক এসে মনের পর্দার উপর কষাঘাত করতে থাকে। এর মানে এই নয় যে, আপনি এখনও ঐ কষ্টগুলো ক্ষমা করতে পারেননি বা ভুলে যাননি, বরং এর অর্থ হলো আপনি একজন মানুষ, আপনার আবেগ আছে, আপনার অনুভূতি আছে। তাই আমি চিন্তা-ভাবনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি যখন কাউকে ক্ষমা করব, তখন যেন আমার বর্তমানের ক্ষমা করবার সিদ্ধান্তের উপর অতীতের কষ্টভোগের অভিজ্ঞতা প্রভাব ফেলতে না পারে, সেই বিষয়ে সজাগ থাকব।
ক্ষমা করলেই
আমাদের অতীত ভূলভ্রান্তির
পরিণতিভোগ গুলো মুছে যায় না
ক্ষমা করলেই যে সঙ্গে সঙ্গেই আপনার সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হবে, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। বরং, ক্ষমা সম্পর্ককে পুনরুদ্ধার করার প্রয়াসে ইচ্ছা পোষন করে ও কাজ করে।
“ক্ষমা অতীত পরিবর্তন করে না, কিন্তু ভবিষ্যৎকে প্রসারিত করে।“
পল লুইস
###ক্ষমা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্বাস পুনর্গঠন করে না
বিশ্বাস ভেঙ্গে যাওয়া, ভূলভ্রান্তির একটি স্বাভাবিক পরিণতিভোগ। ভেঙ্গে পরা বিশ্বাস পুনর্নির্মাণ করতে হলে মন থেকে ক্ষমা প্রার্থনা দিয়ে শুরু করতে হবে এবং মন পরিবর্তনের অঙ্গীকার দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবে প্রকাশ করতে হবে। খোলা মন এবং স্থীরভাবে সৎ থাকলে ভগ্ন-বিশ্বাস আর ভগ্ন থাকে না। বিশ্বাসের বিড়ম্বনা বিলীন হয়ে যায়।
"কাউকে ক্ষমা করার জন্য অনেক সাহস লাগে,
কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার জন্য আরো বড় সাহস লাগে!" অজানা
###ক্ষমা সবসময় সমঝোতার ফলাফল হয় না
যদি উভয় পক্ষ ইচ্ছুক হয়, তবেই সমঝোতার সম্ভাবনা থাকে । আপনি সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চান বটে, কিন্তু অন্য পক্ষ যদি তা না করতে চায়, তাহলে বিষয়টি সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিন। সেই ব্যক্তির প্রতি আপনার যে কষ্ট ও ক্রোধ আছে তাও সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিন। তাদের অনিচ্ছা যেন আপনার জীবনকে ধ্বংস না করে লক্ষ্য রাখবেন। কোন কোন সময় মীমাংসায় না যাওয়া ভাল, যদি মনে করেন যে, অন্য পক্ষ আপনার ক্ষতি করতেই থাকবে; তাদেরকে প্রথমে তাদের ভূল ধরিয়ে দিতে হবে এবং সেই ভুলের ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়ে বের হয়ে আসতে হবে।
আপনার বৈবাহিক জীবনের যেকোন তিক্ততার শিকড় যদি উপড়ে ফেলতে চান, তবে সত্যিকারের ক্ষমা বা মন থেকে ক্ষমাই একমাত্র প্রতিশোধক। এই ক্ষমা আমাদের যেকোন কষ্টের বা ভুল-বোঝাবুঝির বা আঘাতের দেয়াল ভেঙ্গে দিতে পারে, নতুবা বৈবাহিক জীবন হয়ে উঠবে নিরবতার, বিছিন্নতাবোধের এক কঠিন পথ-যাত্রা।
অন্য পক্ষ ক্ষমা চাইবে কি না সেটা মুখ্য বিষয় না। মূল বিষয় হলো, ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে আমি আমার নিজের কঠিন-হৃদয়, অহংকারী মনোভাব এবং লৌকিক-ধার্মিকতাকে স্বীকার করে নেই। এতে যে কোন ব্যক্তিকে ক্ষমা করা আমাদের স্বভাবগত আচরণে রূপ নেয়। যদি আমি মনে করি যে অন্য পক্ষ ক্ষমার অযোগ্য, তাহলে আমার বিচার করার মনোভাবের কারণে নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে বাধ্য হচ্ছি। এর ইতিবাচক অভিজ্ঞতার ফলাফল আসলেই মন-মুগ্ধকর।
###"ক্ষমা বলছে যে, তোমাকে নতুন ভাবে শুরু করার আরেকটি সুযোগ দেওয়া হয়েছে।"
ডেসমন্ড টুটু
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।