আপনি কি কোন নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন ? তবে, এ থেকে মুক্তি পাবার আশা আছে
যে আশা ভরসা নিয়ে জীবনে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে সুখের ভেলায় মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে বিচরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, এই নির্যাতনের ঘূর্ণীপাকে পড়ে আপনার মনে হতে পারে যেন সবকিছু শেষ হয়ে গেল। মনে হতে পারে যেন আপনার মন, প্রাণ কোন খাঁচায় বন্দী হয়ে আছে। মনে হতে পারে যেন আপনি স্বাভাবিক জীবনে আর কখনই ফিরে যেতে পারবেন না। কিন্তু আমি এসেছি আপনাকে এই আশার বাণী শুনাতে যে, আপনি নির্যাতনের এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে পারেন। এই ব্যাধি থেকে নিরাময় লাভ করতে পারেন। যেন আপনি জীবন-স্রোতের প্রত্যাশাকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন। এই প্রসঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ নীচে আলোচনা করলাম।
###কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজে বের করুন
এমন কাউকে খুঁজে বের করুন যাকে আপনি বিশ্বাস করে আপনার সঙ্গে চলমান নির্যাতনের ঘটনা বিস্তারিতভাবে খুলে বলতে পারেন। যেমন, তিনি হতে পারেন কোন একজন ধর্মোপদেষ্টা, স্কুলের আস্থাভাজন কোন শিক্ষক, কোন চিকিৎসক, কোন মনোবিশেষজ্ঞ, অথবা হতে পারে আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একবার এক অল্প বয়সী মহিলা তার বাড়ির নির্যাতন থেকে কীভাবে বেঁচে ফিরেছেন সেই গল্প বলছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শের কথা আমাকে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “আপনার মনের হাহাকার ও জ্বালা-যন্ত্রনা যখন সহ্যের বাইরে চলে যায় তখন আপনি আত্মহত্যা অথবা দেহের বিভিন্ন স্থানগুলোকে ক্ষত-বিক্ষত করার সিদ্ধান্ত নেন, যেগুলো আমি করেছিলাম। তবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে, যদি আপনি সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আপনার ফেটে পড়া কষ্টগুলো বা পরাজয়ের গ্লানিগুলোকে, আপনার চেপে রাখা ঘৃণাগুলোকে মনের অন্তরাল থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এসে বিশ্বাসযোগ্য কাউকে বলতে পারেন। না হলে, সেই কষ্টগুলো আরো দশ গুন করে বেড়ে যাবে এবং জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।”
###নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে কোন উপায় বের করুন
যদি আপনি কোন নির্যাতনের পরিস্থিতিতে বাস করেন, তাহলে সেখান থেকে যথাশীঘ্র বেরিয়ে আসুন! ধ্বংসাত্বক মানুষগুলোর কাছ থেকে কেবল দৌড়ে পালানোই যথেষ্ঠ হবে না, আপনাকে পালিয়ে কোন নিরাপদ স্থান বা নিরাপদ ব্যক্তির কাছে যেতে হবে, যে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে, পরামর্শ দিতে পারে, আপনাকে সহায়তা করতে পারে। যদি আপনার বয়স ১৮ বৎসরের কম হয় এবং আপনি বাংলাদেশে বাস করেন, তবে ১০৯; ৯৯৯; ৩৩৩; ১০৯২১ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি আপনার বয়স ১৮ বৎসরের বেশি হয়, তবে “আইন ও সালীশ কেন্দ্র” (ASK, 01724415677), “সাজিদা ফাউন্ডেশন” (01777771515), সেবা-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আশা করি তারা আপনাকে বেরিয়ে আসতে এবং নিরাপদ জায়গায় যেতে সাহায্য করবে। https://asiapacific.unwomen.org (list-of-helplines)
###অপরাধবোধকে মন থেকে ঝেরে ফেলুন
আপনি কখনই নির্যাতিত হবার জন্য দায়ী নন। কেউ আপনাকে নির্যাতন করবে, তা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। এই পরিস্থিতির জন্য নিজেকে কখনই দোষ দেবেন না, অপ্রয়োজনীয় অপরাধবোধের পাঁকে নিজেকে জড়িয়ে ফেলবেন না। যৌন নির্যাতনের স্বীকার কিছু ব্যক্তিরা সময়টা পার করে দুশ্চিন্তা করে ও নিজেকে দোষ দিয়ে। মনে রাখবেন, যৌন উত্তেজনা মানবদেহের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এর মানে এই নয় যে, এই প্রতিক্রিয়ায় কাউকে নির্যাতিত হতে হবে। অতীতে আপনার এই কাজটি করা উচিত হয়নি, তেমন কোন উপলব্ধি যদি মনে উদয় হয়, তবে নিজের মনকে নিজেই ক্ষমা করে দিন। আপনার উপরে চাপিয়ে দেওয়া অতীতের কিছু ভুলের জন্য অপরাধবোধে নিজেকে আটকে রেখে অসহায় বোধ করবেন না।
###নিজের জীবন নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করুন
আপনার শরীরের উপর নির্যাতনকারীর নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে, কিন্তু আপনার মন, আপনার আবেগকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আপনার মন, আপনার ভাবনা কেবল আপনার নিজস্ব সম্পদ। সেই মন-ভূমিতে জীবনের ইতিবাচক চিন্তার বীজ বপন করুন। যত মিথ্যাকথা আপনাকে বলা হয়েছে সেগুলো মন থেকে ঝেরে ফেলুন এবং সত্য দিয়ে সেই মনকে পূর্ণ করে রাখুন। হয়ত নিজেকে নিজে এভাবে বলতে পারেন যে, “আমি একজন সুন্দর মনের মানুষ। আমার ভিতরে
দয়া-মায়া আছে। আমাকে সবাই ভালবাসে। আমার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। দিনে দিনে আমার জীবন আরও সুন্দর হচ্ছে।” এই চিন্তাগুলো কাগজে লিখুন এবং বারবার সেগুলো দেখুন এবং বলুন। ধূমপান, মদ্যপান, যৌন সম্পর্ক, ঝগড়া ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কাজ দিয়ে নিজের আঘাত ঢাকার চেষ্টা না করে, বরং একা থাকতে শিখুন, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান, সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করুন। দেখবেন আপনি অনেক শান্তি এবং মানসিক শক্তি পাচ্ছেন।
###আপনার গল্প দিয়ে অন্যদের সহায়তা করুন
আপনার সেই কষ্ট ও যাতনার অভিজ্ঞতাগুলোকে সহানুভূতিশীল এবং যত্নশীল স্বভাবে রূপান্তরিত হতে দিন, যেন অন্যের কঠিন সময়ে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন। আপনি হয়ত নিজের জীবনকে স্বাভাবিক করার
প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই চলছেন। অনেকের দৃষ্টিতে, স্বাভাবিকতা মানে হচ্ছে জীবনে বাধাহীনভাবে চলতে পারা, আনন্দ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে চলা, জীবনের গভীর বিষয়গুলো সম্পর্কে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা। তবে আপনি জীবনের সৌন্দর্য ও জটিলতা নিয়ে অনেক বেশি সচেতন এবং প্রাণবন্ত। যদি এই গুণগুলো আপনাকে আরও গভীর এবং আরও ভালবাসাপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলে, তাহলে তা অন্যকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করুন।
###নির্যাতনকারীকে ক্ষমা করুন
হয়ত আপনার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ হবে নির্যাতনকারীকে ক্ষমা করে দেওয়া, কিন্তু এই ক্ষমা করে দেবার অভিজ্ঞতা আপনাকে মুক্তির আনন্দের সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতাও দেবে। এই নির্যাতন থেকে উদ্ধার পাওয়া একজন বলেছিলেন যে, “যারা নির্যাতনের পরিবেশে ও অভিজ্ঞতায় বাস করে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল ক্ষমা করে দেবার উপায় খোঁজা। এই কাজটি এতটা সহজ না, কিন্তু নির্যাতকের সাথে শত্রুতা গড়ে তোলাটাও তেমন কোন কাজে আসবে না।” নির্যাতনকারীকে ক্ষমা করে দিন এবং এমন মানুষদের খুঁজে বের করুন যারা নিজেরাও নির্যাতনকারীদের ক্ষমা করতে সক্ষম হয়েছেন।
নির্যাতিত হয়েছেন বলেই যে আপনার জীবনের ইতি এখানেই, তা ঠিক না। আপনি এই জীবন-যুদ্ধের যাত্রায় বিজয়ী হতে পারেন। আপনি এর সাথে যুদ্ধ করে এখনও টিকে আছেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক, এই আত্মবিশ্বাসটি ধরে রাখুন।
যদি আপনি এই বিষয়ে কারও সাথে কথা বলতে চান, তবে যে কোন সময়ে আমাদের অনলাইন মেন্টরদের একজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই সেবা আপনি বিনামূল্যেই পাবেন। শুধু “একজন ইন্সট্রাকটারের সাথে যোগাযোগ করুন” বোতামে ক্লিক করুন এবং যোগাযোগ শুরু করতে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।