কিভাবে মিথ্যা বলা বন্ধ করব ?
##মিথ্যা বলা একটি মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অভ্যাস
যেকোন ধ্বংসাত্মক অভ্যাসের একটা যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি থাকে। যখন আমরা মিথ্যা বলাকে স্বাভাবিক মনে করি, তখন আমরা কষ্টভোগকেও স্বাভাবিক ভেবে মেনে নেই। একটু ভেবে দেখুন, আমরা যদি মিথ্যা বলা বন্ধ করে সত্যের মধ্য দিয়ে পথ চলতে পারতাম, তবে আমাদের জীবনটা কতই না প্রফুল্লে থাকত । এলিজা কি বলছে চলুন আমরা শুনি: _"আমার মা আমাকে সারা জীবন মিথ্যা কথা বলত... প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন মিথ্যা গল্প সাজাত। ১৪ বছর তার সাথে থাকার পর, কোন কোন সময় আমার চেতনাবোধ জেগে উঠলে মনে হত হয়ত এটা আমার অতিরন্জিত চিন্তা, তাই গল্প সাজিয়ে বলাকে স্বাভাবিক ভেবে মেনে নিতাম এবং মজা পেতাম। আমি কখনই আসলে আমার মায়ের মত হতে চাই না। তা হলে আমি কিভাবে মিথ্যা বলা থেকে মুক্ত হব? আমি চাই না যেন আমার এই মিথ্যা বলার অভ্যাস আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং আমাকে সারা জীবন কষ্ট দেয় !”
এলিজা বুঝতে পারল যে, মিথ্যা বলার অভ্যাস এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মিথ্যার অভিশাপ থেকে মুক্ত না হলে, সেই মিথ্যার কষ্টদায়ক পরিণতি অন্যকেও প্রভাবিত করবে,আর এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের সম্পর্কে মানুষের চিন্তাকে যখনই আমরা মিথ্যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করব এবং এই অভ্যাসকে সহজ ভেবে মেনে নেব, তখন থেকেই আমরা পিচ্ছিল ঢাল বেয়ে বেদনাদায়ক ও মিথ্যা বলার সহজাত প্রবৃত্তির গর্তে পতিত হতে থাকব।
তাহলে, এই মিথ্যা বলার অভ্যাস থেকে মুক্ত হবার উপায় কি? আমি আজকে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।
##মিথ্যা বলার অভ্যাস থেকে মুক্তির কয়েকটা বাস্তব পদক্ষেপ
###সমস্যাকে স্বীকার করে নেয়া
এটাই মিথ্যা বলা থেকে মুক্তির সবচেয়ে প্রথম, সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ। সমস্যাটা যত বড়ই হোক বা যত ছোটই হোক না কেন, বিশ্বস্ত কাউকে খুঁজে নিয়ে আপনার মিথ্যা বলার অভ্যাস সম্পর্কে তাকে খুলে বলুন। কারণ, মূল বিষয় হচ্ছে, আপনি মিথ্যা বলার অভ্যাস থেকে আসলেই মুক্ত হতে চান, কিন্তু নিজে নিজে সেই অভ্যাস থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। তাই মেনে নিন যে আপনার সাহায্য প্রয়োজন। আমার খুবই পরিচিত এক বোন বলেছিলেন, _"আমার সাথে এক লোকের পরিচয় হয়েছিল যিনি এখন আমার স্বামী। আমি তার সাথে পুরোপুরি সৎ থাকতে চেয়েছিলাম বলেই আমার মিথ্যা বলার অভ্যাস থেকে মুক্ত হবার উপায় খুঁজছিলাম। আমি তার সাহায্য চেয়েছিলাম এবং সে আমাকে এত ভালবাসত যে, (কোন কোন সময় তাকে মিথ্যা বলতাম) অবাক হতাম, তবুও সে আমার পাশে থাকত এবং আমার ঐ অভ্যাস থেকে মুক্ত হবার যুদ্ধে সহযাত্রী হত”।
###কিভাবে মিথ্যা বলার অভ্যাস আপনার জীবন এলোমেলো করে দেয় সেই বিষয়ে মনকে সদা সজাগ রাখুন
মিথ্যা বলার অভ্যাস সম্পর্ককে তো ধ্বংস করেই, একই সময় জীবনের উপর বিশাল এক যন্ত্রনার ভারি বোঝাও চাপিয়ে দেয়। এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সজাগ থাকাই মিথ্যা বলার অভ্যাসের বিপক্ষে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ। জেমস্ মিথ্যা বলার চরম পরিণতি ভোগ করেছিলেন, চলুন শুনি তিনি কি বলেন, _"আমি সব সময়ই মিথ্যা কথা বলতাম, এবং সাধারণত শেষ পর্যন্ত ধরাও পড়তাম। এই কারণে আমাকে জেলেও যেতে হয়েছে। আর সেই কারাবন্দী জীবনে গিয়ে আমি শিখেছি যে, মিথ্যার গোলক ধাঁধায় না জড়িয়ে সত্যের পথে চলাই উত্তম। আমি যা বলছি বা যা করছি তার পরিণাম কি হতে যাচ্ছে তা চিন্তা করার জন্য সময় নিন ”।
###কি আপনাকে মিথ্যা বলতে প্ররোচিত করে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
আপনি কি লুকানোর চেষ্টা করছেন? সত্য কথা বলার চেয়ে ভালো উপায় আর কি হতে পারে! যেমন, সমস্ত মাদকাসক্তরা মনে করে যে তাদের আসক্তি ঢাকতে তাদের অবশ্যই মিথ্যা বলতে হবে। তারা যত বেশী তাদের আসক্তি ঢাকে, তত বেশী তারা মিথ্যা এবং বিভ্রান্তির জালে জড়িয়ে পরে। প্রায় প্রতিটা মিথ্যার পিছনে একটা কারণ থাকে। ভুল পদক্ষেপ প্রায়শই মানুষকে মিথ্যার দিকে ধাবিত করে। চারপাশের লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করতেই সুজাতা মিথ্যা বলত। এই অভ্যাসের দাসত্বের বন্ধনে সে আসক্ত হয়ে পরে। চলুন আমরা শুনি তিনি কি বলেন, _"আমি মিথ্যা না বলার চেষ্টা করতাম, কিন্তু আমার অস্বাভাবিক কোন আচরণের কারণে আমি যদি দেখতাম যে কেউ আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তবে আমি মিথ্যা বলতাম যেন আমি আবার নিজেকে তার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি। আর এভাবেই আমি অবশেষে ভয়ানক মিথ্যার চক্রে নিজেকে আবিষ্কার করতাম।”
###কাউকে মিথ্যা বললে তার কাছে তা স্বীকার করুন।
মিথ্যা স্বীকার করে নিলেই কিন্তু সবকিছুই আলাদা হয়ে যায়। এই স্বীকারোক্তির কারণে হয়ত আপনার অহংকারের উপর আঘাত আসতে পারে, তথাপি মিথ্যাবাদী পরিচয়ের চেয়ে তো অনেক ভালো। আরও ভাল হবে যদি আপনি মিথ্যা স্বীকার করেন এবং ক্ষমা চেয়ে নেন। আপনার এই নম্রতার আচরণ আপনাকে মিথ্যা না বলতে এবং অন্য আর একটা মিথ্যা বলার আগে ভাবতে সাহায্য করবে। আমার অভিজ্ঞতায়, _স্বীকারোক্তি হলো মিথ্যা-রোগের প্রতিশোধক এবং আত্মীক সত্বার প্রশান্তি।
স্বীকারোক্তি মিথ্যা বলার অভ্যাস ভাঙ্গতে সাহায্য করে।
সৃষ্টিকর্তার কাছে মিথ্যাগুলো স্বীকার করে নেয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, কারণ মানুষ আপনার অন্তরের কথা না জানলেও তিনি কিন্তু আপনার মিথ্যাগুলো ঠিকই শুনছেন। তাই আপনি যখন তা তাঁর কাছে স্বীকার করবেন, তিনি আপনার সেই মিথ্যা বলার অভ্যাস ভাঙতে সাহায্য করবেন। ধর্মগ্রন্থে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটা কথা আছে যা এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে:
_”তোমরা যা সহ্য করতে পার তেমন পরীক্ষাই তোমাদের প্রতি ঘটে; সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা হতে দেবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার উপায়ও বের করে দেবেন, যেন তোমরা সহ্য করতে পার।”
###অন্যদের কাছে করা প্রতিশ্রুতিগুলো সম্পর্কে বাস্তববাদী হোন।
ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলা প্রতিশ্রুতিগুলো মিথ্যার সামিল এবং এই মনোভাব দিনে দিনে আপনার মনকে কষ্টে দু:খে ভরে দেবে। আপনি প্রতিশ্রুতি দেন ঠিকই, কিন্তু মন থেকে তা রক্ষা করতে চান না, এই মনোভাবও মিথ্যার সামিল। সব প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা সম্ভব না, এই বাস্তবতাকে ঢেকে রাখতেই আমরা বহূ রকম মিথ্যা বলা শুরু করি। তাই আপনার পক্ষে যে প্রতিজ্ঞাগুলো রক্ষা করা বাস্তবে সম্ভব সেই ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত থাকুন। নিজের এবং অন্যের কাছে আপনার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নিন, এতে আপনি মিথ্যা বলার চাপ থেকে মুক্ত থাকবেন।
###সত্য বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
যখন আপনি মিথ্যা বলার চাপ অনুভব করেন, তখন সেই চিন্তার লাগাম টেনে ধরুন এবং এক মুহূর্তের জন্য বিষয়টা নিয়ে ভাবুন। আপনি যে মিথ্যা বলছেন, তা যদি কেউ বুঝতে পারে, তবে সে আপনার সম্পর্কে কি ভাববে, একটু ভেবে দেখুন! আপনাকে কেউ যদি সবসময় মিথ্যা বলে, তবে আপনার কেমন লাগবে, একটু ভেবে দেখুন। তাই, যতই কষ্টই হোক না কেন, সত্য কথা বলুন। আমরা যত বেশি সত্য বলার অভ্যাস গড়ে তুলব, তত বেশি আমাদের জীবন সহজ হয়ে উঠবে। মিথ্যা বলা একটা মন্দ অভ্যাস। আর সত্য বলা একটা ভাল অভ্যাস। তাই, ভাল অভ্যাস দিয়ে মন্দ অভ্যাসের দেয়াল ভেঙে ফেলুন।
চলুন শুনি তুহিন কি বলেন: _"যখন কেউ মিথ্যা বলতে গিয়ে ধরা পড়ে তখন তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে। সে এতো মিথ্যা কথা বলে যে, কখনও সত্য কথা বললেও তাকে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। পরিণতি অপ্রীতিকর হলেও, আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের স্বার্থে সবসময় সত্য কথা বলুন !”
##আমরা যত বেশি সত্য কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলব, তত বেশি আমাদের জীবন সহজ হয়ে উঠবে।
###যে কোন মূল্যের বিনিময়ে সততার জীবনে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকুন।
সত্য বলা আপনার জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু তা আপনাকে সততা এবং ন্যায্যতার পথে চলতে সাহায্য করবে, জীবনে আপনি যেমন হতে চেয়েছিলেন, তেমনই একজন ব্যক্তিত্বে নিজেকে আবিষ্কার করবেন। আপনি যদি কোন প্রশ্নের উত্তর না জানেন, তবে মিথ্যা উত্তরও দেবেন না, আবার বানিয়েও কিছু বলবেন না। বরং বলুন, আমি জানি না। এতে সত্যের স্বাধীনতার জয় হবে।
###যে কোন আসক্তির মতই মিথ্যা বলার অভ্যাসও বন্ধ করা সহজ নয়। কিন্তু বন্ধ করতে পারলে পরিণতি ভাল।
মিথ্যা বলা বন্ধ করা এতো সহজ কাজ না, আমি স্বীকার করি। চলুন তানিয়া কি বলে শুনি, _"আমি শিখেছি যে, মিথ্যা বলা একবার শুরু করলে সেই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা ভীষণ কঠিন হয়। এই অভ্যাস থেকে মুক্ত হবার জন্য প্রচন্ড পরিশ্রম করতে হয় এবং জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকা এই অভ্যাস থেকে স্বাধীন হবার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হতে হয়।”
যাহোক, আপনি যা বলছেন এবং করছেন সেই বাস্তবতায় জেগে উঠুন এবং মিথ্যা বলা বন্ধ করার প্রতিজ্ঞা করুন। এতে আপনি অতিশীঘ্রই শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের একটা সুফল দেখতে পাবেন। আমি কথা দিচ্ছি, আপনি যদি এই মুহূর্তে এই বিষাক্ত এবং ধ্বংসাত্মক অভ্যাস বন্ধ করার চেষ্টা করেন, তাহলে নিজের উপর নিজেই চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবেন।
এই প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য নীচে লিখে জানান। সৎ থাকার সুফল সম্পর্কে আপনি কি মনে করেন, জানতে চাই।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।