কোনটা আসল সত্য এবং কোনটা আসল মিথ্যা বুঝব কিভাবে?
আপনি কি করতেন যদি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আপনি আপনার বাড়িতে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকে লুকিয়ে রাখতেন এবং একজন পাকিস্থানী সেনা আপনার দরজায় এসে জিজ্ঞেস করত যে ভেতরে কোন মুক্তিযোদ্ধা আছে কিনা? আপনি কি সত্য বলতেন আর ঐ যোদ্ধাদের মেরে ফেলতে দিতেন, নাকি আপনি তাদের রক্ষা করতে মিথ্যা বলতেন? আমার ধারণা বেশীরভাগই “যৌক্তিক উত্তর” দেবেন এবং বলবেন যে, তারা মিথ্যা বলতেন এবং তাদের রক্ষা করতেন।
বেশীরভাগ মানুষ জানে যে গণহত্যার সময় যা ঘটেছে তা সত্যিকার অর্থে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুল ছিল। কিন্তু, সেই গনহত্যার পরিকল্পনাকারী ও মদদ-দানকারী বা উষ্কানীদানকারীদের দৃষ্টিতে তো তা ছিল সঠিক! তাই যদি হয় তবে কে সিদ্ধান্ত নেবে-কোনটা ঠিক বা কোনটা বেঠিক?
চূড়ান্ত নৈতিকতার অস্তিত্বকে ভুল প্রমানিত করার ক্ষেত্রে মানুষ এখন পর্যন্ত নৈতিকভাবে উভয়-সঙ্কটময় পরিস্থিতির সম্মুখিন হচ্ছে। কেউ কেউ চিন্তা করে যে, হয়ত বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা ঠিক না, কিন্তু, অন্যদিকে কিছু কিছু পরিস্থিতি আসে যখন সত্য বলা যায় না! তাহলে, এই নৈতিক উভয়সঙ্কটময় পরিস্থিতি বাস্তবে কী প্রমান করে? আমার যুক্তি হলো, এই নৈতিক উভয়-সঙ্কটময় পরিস্থিতি চূড়ান্ত নৈতিক পরিস্থিতির অস্তীত্বকে ভুল প্রমানিত করে না। আমার এই সার-সংক্ষেপ, উপরের ঘটনার কাঠামোর উপর ভিত্তি করে পর্যালোচিত হয়নি। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, যদি চূড়ান্ত নৈতিক পরিস্থিতির অস্তীত্ব না থাকে, তবে উভয়-সঙ্কটময় পরিস্থিতির অস্তীত্বও থাকে না। নৈতিক উভয়-সঙ্কটময় পরিস্থিতির কারণে যখন কোন কোন পরিস্থিতিতে কেউ একের অধিক চূড়ান্ত নৈতিকতার অস্তিত্বে বৃহত্তর জনকল্যানকর স্বার্থের সম্মুখীন হয়, তখন পরিস্থিতিকে আসল সত্য বলে ধরে নেয়।
এই রকম নৈতিকতার উভয়-সঙ্কটময় পরিস্থিতির কারণে, আবার অন্যদিকে গর্ভপাত, যন্ত্রনাহীন মৃত্যু (ইউথ্যান্যাসিয়া), বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতা ও মৃত্যুদণ্ডের মতো বড় বড় সব নীতিগত প্রশ্নের মতভেদগুলোর কারণে অনেকে মনে করেন যে নৈতিকতা অবশ্যই ব্যক্তি, সামাজিক-সংস্কৃতি বা সময়ের সাথে সম্পর্কিত ও উপযুক্ত হতে হবে। নীতিগত (ethical) অপেক্ষবাদ* (হাঁ/না) অযৌক্তিক এবং নৈতিকতা বস্তুনিষ্ঠভাবে* সত্য, এই ধরণের দার্শনিকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে যা মানুষ বুঝতে পারছে না।
এক জরিপে দেখা গেছে যে, পশ্চিমা সমাজের বেশীরভাগ মানুষ দাবি করে যে তারা নৈতিকভাবে অপেক্ষবাদী; অর্থাৎ, তারা মনে করে যে একজন ব্যক্তির জন্য যা সঠিক তা অন্যের জন্য সঠিক হবে তা ভাবা ঠিক না। কোন চূড়ান্ত নৈতিক নীতি বা মনোনির্ভর নৈতিকতার অস্তীত্ব নেই, এটা বলা খুবই সহজ। তবে নৈতিকতার কোন অস্তীত্বই নেই, এটা ভেবে জীবন-যাপন করা কিন্তু ভীষণ কঠিন।
কোন চূড়ান্ত নৈতিক নীতি বা মনোনির্ভর নৈতিকতার অস্তীত্ব নেই, এটা ভেবে জীবন-যাপন করা কিন্তু ভীষণ কঠিন।
সঠিক বা বেঠিক আমরা যাই বিশ্বাস করি না কেন তা আমাদের জীবন-যাপন, আমাদের আচার ব্যবহার এবং আমাদের সঙ্গে মানুষের আচরণে আমাদের অভিব্যক্তি, অন্যদের প্রতি মানুষের আচরণে আমাদের বিচার-রায় ইত্যাদি বিষয়গুলোর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছয় লক্ষ ইহুদীদের মেরে ফেলা বা নির্যাতন করা নৈতিকভাবে ঠিক কাজ ছিল না আমরা বিশ্বাস করি। আমরা শুধু যে নিজেরাই মনে করি যে তা ভূল ছিল তা না, পাশাপাশি আমরা চাই যেন অন্যরাও আমাদের সাথে একমত হয়।
আমরা সবাই কোন একটা বিষয়কে ভুল মনে করছি বলেই যে বিষয়টা ভুল, তা কিন্তু বলা ঠিক না। আমরা সবাই মিলে যে বিষয়টাকে ভুল বলে মনে করছি তা ভুল নাও হতে পারে, কারণ এর পিছনে ইতিবাচক যৌক্তিক সম্ভাবনা থাকতে পারে। হয়ত আমরা যে সংস্কৃতিতে ও পরিপ্রেক্ষিতে বেড়ে উঠেছি সেই আলোকে বিচার করে বিষয়টাকে ভুল বলে মনে করছি! ভুল চিন্তা করার পিছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে বৈকি, কিন্তু এমনও কি হতে পারে না যে আমাদের সূক্ষ্ম অন্তর্জ্ঞান ঠিক বিষয়টাকে ভুল বলে মনে করছে? তারমানে কি দাঁড়াল, মানুষকে অত্যাচার করা আসলে ভুল না? আমরা মনে করি ভুল!
কিন্তু, যদি এই মৌলিক অন্তর্জ্ঞান ভুল হয়, যদি এই ভুল আমাদের সংস্কৃতির অভ্যাসগত বিচার-বুদ্ধির ফল হয়, তাহলে এটা কি সম্ভব যে আমাদের অন্যান্য মৌলিক বিশ্বাস এবং উপলব্ধি, যেমন সংস্কৃতির অভ্যাসগত বিচার-বুদ্ধির উপর আমাদের বিশ্বাস কি এই একই প্রক্রিয়ার ফল? যদি তাই হয়, তাহলে মনে হচ্ছে যুক্তির এই কারণগুলো আসলে স্ব-বিরোধী। নিজের পরীক্ষায় নিজেই ব্যর্থ হয়।
অবশেষে, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াই যুক্তিসঙ্গত যে, নিশ্চয় একটা চূড়ান্ত নৈতিক সঠিক বা ভুল সিদ্ধান্ত আছে, যা সংস্কৃতির নৈতিক অভ্যাসগত বিচার-বুদ্ধিকে অতিক্রম করে যায়। যদি তা নাই হয়, তবে আমরা কিভাবে আইন-কানুন, নতুন প্রজন্মদের শিক্ষার মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রতিষ্ঠিত করব এবং প্রয়োগ করব? যদি প্রতিটি প্রজন্মকেই নতুন ভাবে শুরু করতে হয় এবং নিজস্ব সংজ্ঞা তৈরীর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তবে তো চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে, নিশ্চয়ই আরও বৃহৎ জ্ঞানের এবং অতিপ্রাকৃতিক কোন একটা উৎস থাকাটাই বাঞ্চনীয়, যা কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল নির্ধারণ করতে পারবে। সেই নির্ধারণ হবে বস্তুনিষ্ঠ, প্রমানসিদ্ধ ও নিরপেক্ষ।
খ্রীষ্টে অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, যদি সঠিক এবং ভুলের বস্তুনিষ্ঠ কোন নীতিমালার অস্তিত্ব থেকেই থাকে, তাহলে অবশ্যই এর উৎস বা ভিত্তি থাকতে হবে। আর সেই ভিত্তি হলো সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ও অর্থবহ নিখুঁত এবং পবিত্র ঈশ্বরের চরিত্র, যিনি সামাজিক সহভাগিতার জন্য নিশ্চিত, স্থির ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। তবে খ্রীষ্টে অনুসারীরা বিশ্বাস করে যে, সেই পবিত্র ঈশ্বর মানুষকে এতো ভালবাসলেন যে, পথপ্রদর্শক হিসেবে পবিত্র আত্মা’কে পাঠালেন যেন মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনের নীতিমালাগুলো পালন করতে পারে।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।