পর্নোগ্রাফির ভয়ঙ্কর ছোবল - অশ্লীল যৌন ছবিতে আসক্তি

আমাদের সামাজিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম একটি মৌলিক অগ্রগতি, যেটা প্রযুক্তিবিদদের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করে। বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই মাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে মানব কল্যানে প্রযুক্তিগত, যৌক্তিক, উন্নয়নমূলক ও গঠনমূলক অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হচ্ছে। অতীতে মানুষ যা কল্পনা করেছে তারই বাস্তবরূপ এই ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম। এর মাধ্যমে দুই ধরনের উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে—সামাজিক যোগাযোগ উন্নয়ন ও প্রকৌশলীর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।

এখানে আমরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করব।

সামাজিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ও এর প্রভাব

এই সামাজিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক, নেতিবাচক দুই ধরনেরই প্রভাব আছে। এই আর্টিকেলে আমরা নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

সারা বিশ্ব এখন এই মাধ্যমকে হুমকি মনে করছে। যুব সমাজ প্রচন্ডভাবে এই মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরছে। এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে, এত দ্রুত গতিতে নেতিবাচক ও ভয়ঙ্কর সব অসামাজিক ও অশ্লীল সাইট বৃদ্ধি পাচ্ছে যেটা সত্যিই কল্পনার বাইরে। বিশ্লেষকের গবেষনায় এসব সাইট সামাজিক কাঠামোর উপর ক্রমশই আঘাত হানছে। সামাজিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমের একটি উপাদান হল পর্নোগ্রাফি। এই আলোচনায় আমরা পর্নোগ্রাফির নেতিবাচক দিকগুলোর পর্যালোচনা করব এবং এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করব।

পর্নোগ্রাফি (সংক্ষেপে “পর্ণ” বা “পর্নো” অনানুষ্ঠানিক ব্যবহারে) (ইংরেজি: Pornography) যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌনসংক্রান্ত বিষয়বস্তুকে দৃশ্যমান করে তোলা বা এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেওয়া। পর্নোগ্রাফি শব্দটি গ্রিক শব্দ “পরনোগ্রাফিয়া” থেকে নেওয়া হয়েছে। পর্নোগ্রাফি বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে উপস্থাপন করা হতে পারে, যেমন, ম্যাগাজিন, পোস্টকার্ড, ফটোগ্রাফ, ভাস্কর্য, হাতে আঁক ছবি, পেইন্টিং, অ্যানিমেশন, সাউন্ড রেকর্ডিং, চলচ্চিত্র, ভিডিও ও ভিডিও গেম।

যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য-চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, আঁকা ছবি, বা অন্য যে কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য বিষয় — যার কোনো প্রকার শৈল্পিক মূল্য নেই – তাকে পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেশিরভাগ যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, পত্র-পত্রিকা, ভাস্কর্য, কল্প-মূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা প্রচারপত্র পর্নোগ্রাফি হিসেবে বিবেচিত হবে। এসবের নিগেটিভ বা সফ্ট কপিও পর্নোগ্রাফি হিসেবে গণ্য হবে।

পর্নোগ্রাফি আমাদের দেহে ও মস্তিষ্কে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা নারী পুরুষকে অমানবিক, আপত্তিকর আচরণ করতে বাধ্য করে ও সমাজকে অধঃতনের দিকে ঠেলে দেয়। সাধারণত, এটি ফটো বা ভিডিও; কখনও কখনও গল্প বা কমিক বইয়ের ছবির আকারে প্রকাশিত হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসিএইচ) ওসিসির সমন্বয়ক বিলকিস বেগম শিশুদের ধর্ষণকারী হিসেবে সাধারণত পরিচিতজন বা পরিবারের লোকজনের নামই পান। সম্প্রতি কিশোরী ধর্ষণের কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছেন মুঠোফোন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত পুরুষেরা। তাঁর মতে, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটে পর্নো ছবি দেখার অভ্যাস ধর্ষণের চর্চা বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশে সাধারণভাবে পর্নোগ্রাফির ব্যবহার কেমন বা কারা এর ভোক্তা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট জরিপ বা তথ্য নেই৷ জরিপের ফলোআপে দেখা যায়, ৩০-৩৫ বছর যাদের বয়স এবং তাদের মধ্যে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের শতভাগই একবার হলেও পর্নোগ্রাফি দেখেছেন৷ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখেন ৯০ ভাগ৷ আর তরুণীদের মধ্যে সংখ্যাটা শতকরা ৫০ ভাগ৷''

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে৷ তার মধ্যে বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে পর্নোগ্রাফির প্রবণতা বাড়ছে৷ টেক্সট, ছবি ও ভিডিও-র বাইরে অডিও পর্নোগ্রাফি একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ পেশাদারদের মধ্যে সেক্স টেক্সটের অডিও তৈরি করে তা অনলাইনে ছাড়া হচ্ছে৷ ইউটিউব-এ ‘আপলোড' করা হচ্ছে৷ এর বাজারও বাড়ছে৷ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘রাস্তার তরুণরা হাঁটছে৷ তখনও হেড ফোনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বুঁদ হয়ে আছে৷ আমরা হয়তো মনে করি, তিনি গান শুনছেন বা কথা বলছেন৷ আসলে আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, এর বড় একটি অংশ মোবাইলে অডিও পর্নোগ্রাফি শোনে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘শুধু তরুণরা নয় সব বয়সের মানুষই পর্নোগ্রাফি দেখে৷ আর পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা এর ব্যবহারকারী বা গ্রাহক বাড়িয়ে দিচ্ছে৷

তিনি বলেন,‘‘পর্নোগ্রাফিতে যারা আসক্ত হয়ে পড়েন, তারা বিকৃত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন৷ এটা নিজেদের ক্ষতির দিক ৷ কিন্তু এর প্রধান শিকার হন নারী ও শিশুরা ৷ তাদের এ কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার প্রধান কারণ এই পর্নোগ্রাফি৷''

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘এই পর্নোগ্রাফির কারণে অনেকের পারিবারিক ও সামাজিক আচরণ বদলে যাচ্ছে৷ পরিবারের বাইরে গেলেই পর্ণআসক্তরা সবকিছু পর্নো দৃষ্টি দিয়েই দেখে৷ এমনকি কেউ কেউ গ্রূপ সেক্সেও অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে৷''

পর্নের মিথ্যা আশ্বাস

পর্নোগ্রাফি দেখে আপনি যৌনতা সম্পর্কে কোন সত্য জানতে পারবেন না। পর্নোগ্রাফি জ্ঞান অর্জনের জন্য না, বরং বিক্রির জন্য। দর্শকশ্রোতাদের ধরে রাখতে ও আকৃষ্ট করতে পর্নোগ্রাফি যেভাবে ইচ্ছা চাহিদা অনুসারে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। মিথ্যার উপরেই পর্নোগ্রাফি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। যৌনতা সম্পর্কে মিথ্যা, নারী সম্পর্কে মিথ্যা, বিয়ে সম্পর্কে মিথ্যা, এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে মিথ্যা তথ্যে দর্শকশ্রোতাদের আকৃষ্ট করে রাখে।

পর্ণ দেখলে যেসব ক্ষতি হয়

১. অতিরিক্ত পর্নের নেশা ড্রাগের চেয়েও মারাত্মক। পর্ণ ড্রাগ, মদ বা সিগারেটের মতোই আসক্তি তৈরি করে। পর্ণ দেখলে মস্তিষ্কে একটা ‘ফিল গুড’ রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি হয়। এর নাম ডোপামিন। একটানা পর্ণ দেখলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন সামান্য ডোপামিনের ক্ষরণে উত্তেজনা তৈরি হয় না। আরও বেশি ডোপামিনের জন্য মস্তিষ্ক আরও বেশি পর্নের রসদ খোঁজে এবং আসক্তি বাড়িয়ে তোলে। ২. অতিরিক্ত পর্নের আসক্তি সম্পর্কের ক্ষতি করে। যত বেশি পর্ণ দেখবেন, ততই আপনি একটা ফ্যান্টাসির জগতে চলে যাবেন। এর ফলে বাস্তবের সম্পর্কগুলো আর আপনাকে সুখ দিতে পারবে না, যা সম্পর্কের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। ৩. অতিরিক্ত পর্ণ মানসিক রোগের জন্ম দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ণ দেখা হয় একা, সমাজের চোখ এড়িয়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে একটা অপরাধ বোধ জন্ম নেয়। যা থেকে ভবিষ্যতে মানসিক রোগ হতে পারে। ৪. অতিরিক্ত পর্ণ আপনার মনে ভাবনার শক্তিকে নষ্ট করে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পর্ণ তারকারা মেক আপ, ফটোশপ এবং কসমেটিক সার্জারির সাহায্য নেন। বেশি পর্ণ দেখলে আপনি মানসিকভাবে বাইরের মানুষদের মধ্যে সেই তারকাদের খুঁজে পেতে চেষ্টা করবেন। ৫. অতিরিক্ত পর্ণ আপনার স্বাভাবিক যৌনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। অতিরিক্ত পর্ণ আপনার সঙ্গীর প্রতি আসক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে নষ্ট হয় স্বাভাবিক যৌনজীবন। ৬. পর্ণ দেখা লোকজনের ইরেক্টাইল ডিসফাংশান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অতিরিক্ত পর্ণ মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে এই রোগের সৃষ্টি করে। ৭. পর্ণ নারী পাচারের প্রবণতা বাড়ায়। পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিতে যারা যুক্ত, তাদের অনেকে স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিলেও নতুন মুখের চাহিদা এখানে প্রবল। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যোগান বাড়াতে গিয়ে নারী পাচারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ৮. পর্ণ মানুষকে বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে। দেখা গেছে, একেবারে সাদামাটা পর্ণও অতিরিক্ত দেখলে তা দর্শকের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। এছাড়াও মানুষকে অতি আক্রমণাত্মক, বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে।

  • চিন্তা (আজ আমি পর্ণ দেখবো)
  • ডিভাইস (মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি পর্ণ দেখার জন্য)
  • জায়গা (কোনো খালি একটি রুম বা ঘর)

এই তিনটি জিনিস থেকে যেকোনো একটি জিনিস বাদ দিন। দেখবেন পর্ণ আর দেখা হবে না।

পর্ণোগ্রাফির আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

ইদানিং পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তের সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাচ্ছে। ছোটো ছোটো বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝেও আসক্তির মাত্রা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। সম্পর্কগুলো দিন দিন বেশ জটিলতার দিকে এগোচ্ছে। কখনো কখনো তা সম্পর্কচ্ছেদের করুণ পরিণতিতে গিয়ে শেষ হয়।

পর্ণোগ্রাফিযৌনতা প্রাণীজগতে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয়, যখন তা পর্নোগ্রাফির মতো একটি বিষয়ে আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। আজ চলুন এ পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ ছোবল থেকে কীভাবে নিজেকে এবং সেই সাথে আমাদের সমাজটাকে রক্ষা করা যায়, সেই সম্পর্কে জানা যাক। প্রথমেই আসা যাক, পর্ণ দেখার কোন লেভেলকে আমরা আসক্তি বলছি কিংবা আপনার জীবনসঙ্গী কি আসক্ত কিনা তা বুঝবেন কীভাবে।

  • অধিকাংশ আসক্তের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা বেশ ছোটবেলা থেকে পর্ণ দেখে অভ্যস্ত এবং কৈশোরে পদার্পণের পর ধীরে ধীরে পর্ণ দেখার মাত্রা বাড়তে থাকে। কখনো কখনো যৌবনে পদার্পণের পূর্বেই বেশ ভালো ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। দৈনিক ৩-৪ ঘন্টা পর্ণ দেখা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়, প্রতিদিনের রুটিনও বলতে পারেন।
  • পর্ণ আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই। যতই দেখবেন ততই দেখতে ইচ্ছা করবে। সাময়িক সুখের বিনিময়ে আপনাকে বিষণ্ণ এবং নিঃসঙ্গ মানুষে পরিণত করবে। যা আপনাকে আপনার স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
  • বৈবাহিক জীবনে স্ত্রী/স্বামীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • আসক্তির মাত্রা কখনো কখনো এমন স্তরে পৌঁছায় যে তা ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন এবং অযাচিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয়। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো তরুণদের মাঝে যৌনতা নিয়ে মস্তিষ্কে বিকৃত ধারণা তৈরি হয়।
  • কখনো কখনো আসক্তির কারণে স্বামী/স্ত্রীর প্রতি যৌন আকর্ষণ ও অনুভূতি ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে এবং শারীরিক মিলন বিষয়টিই খুব বিরক্তকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

পর্ণ-আসক্তিনারীদের তুলনায় পুরুষদের মাঝে পর্ণ আসক্তির মাত্রা বেশি। চলুন এবার দেখে নেই পর্ণ আসক্তি আপনাকে কীভাবে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শারীরিকভাবে পর্ণ আপনাকে ধীরে ধীরে যৌন অক্ষম করে তোলে। পর্ণ কিংবা শারীরিক মিলনে আপনার মস্তিষ্কের কিছু হরমোন ও রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা আপনার দেহে যৌন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে।

  • শারীরিক মিলনে এবং পর্ণ দেখার সময় মস্তিষ্কে ডোপামিন নির্গত হয় যা আমাদের আনন্দ, হাসি কান্নাসহ যৌন অনুভূতিও নিয়ন্ত্রণ করে। শারীরিক মিলনে এবং পর্ণ দেখার সময় এই ডোপামিন আমাদের মনোযোগ ও যৌনক্ষুধা জাগিয়ে তোলে।
  • অক্সিটোসিন এবং ভেসোপ্রসিন নামক দুইটি হরমোন ও এসময় নির্গত হয় যা এই সুখের অনুভুতিকে আমাদের স্মৃতিশক্তিতে জমা রাখে।
  • এছাড়াও শারীরিক উত্তেজনাকে চরমে নিতে এন্ডোরফিন নামক হরমোন আমাদের দেহের ভেতরে নির্গত হয়। মিলনের একেবারে শেষ মুহূর্তে সেরাটোনিন হরমোন দেহের ভেতরে নির্গত হয়।

আপনার মস্তিষ্ক আপনার সর্বোচ্চ সুখের অনুভুতিকে আপনার স্মৃতিতে ধারণ করে রাখে এবং আপনি সেই সুখের অনুভুতিকে লাভ করার জন্য আপনার আবার পর্ণ দেখতে ইচ্ছা হয় কিংবা আপনি শারীরিক মিলনে লিপ্ত হতে অতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। পর্ণোগ্রাফি আপনার মস্তিষ্ককে অস্বাভাবিকভাবে উত্তেজিত করে তোলে। এতে প্রচুর ডোপামিন ক্ষরণ হয়। ফলে আপনার মস্তিষ্কে ধীরে ধীরে ডোপামিন নির্গত হওয়ার পরিমাণ কমে যায়। তখন আপনার সাধারণ পর্ণ ভিডিও দেখার আগ্রহ কমে যায় আর নতুন নতুন, তীব্র ও উত্তেজক ভিডিও দেখার চাহিদা বাড়তে থাকে। এভাবে বার বার একই প্রক্রিয়া দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে আপনার মস্তিষ্কে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে শারীরিক মিলনের ইচ্ছা ও ক্ষমতা দুটোই ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে। একই সাথে হয় পর্ণে দেখানো শিল্পীদের সাথে না হয় সেখানে দেখানো বিভিন্ন ভঙ্গিমা অবলম্বন করে আপনার যৌন মিলনের ইচ্ছা তীব্র হতে থাকে। এটা আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন। যেমন – স্বামী/স্ত্রীর সাথে অনুত্তেজক সম্পর্ক, বিষণ্ণতা, সহজেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলা, অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করেও উত্তেজনা ফিরে না পাওয়া ইত্যাদি।

পর্ণ দেহের কামশক্তিকে ধ্বংস করে:

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, যৌনতা খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। বিপরিত লিঙ্গের দুটি মানুষ কাছাকাছি কিংবা শারীরিক সংস্পর্শে এলে ভালবাসার অনুভূতি জন্মায় ও যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু আসক্তদের ক্ষেত্রে দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে তারা স্ত্রীর সংস্পর্শে স্বাভাবিক উত্তেজনা কিংবা কামনা অনুভব করে না। এ সমস্যা বিবাহিত আসক্তদের মাঝেই বেশি।

পর্ণ-আসক্তি ভালবাসার অন্তরায়

পর্ণ ভিডিওতে যেসব মডেল কিংবা অভিনেতা – অভিনেত্রী অভিনয় করেন তারা সাধারণত পেশাদার শিল্পী হয়ে থাকেন। সেই মডেলদের শারীরিক সৌন্দর্যের মোহে অভিভূত হয়ে আপনি আপনার সঙ্গিনী কিংবা স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করেন। এতে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনি হতাশ হবেন। এই হতাশা আপনার সঙ্গী/সঙ্গিনীর মনকে আঘাত করে আর সম্পর্ক ভাঙ্গন ধরে। শুধু তাই নয় আসক্তদের মাঝে সম্পর্কে অবিশ্বাসও দেখা যায়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা বহুগামিতাও দেখা যায়।

পর্ণ-আসক্তিপৃথিবীতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ শারীরিক মিলনে লিপ্ত হচ্ছে কিন্তু ঠিক কতজন মানুষ সেই মিলনকে ভালবাসার মিলনে পরিণত করতে পেরেছেন তা নিয়ে বেশ সন্দেহ রয়েছে। শুধুমাত্র শারীরিক উত্তেজনা বা প্রবৃত্তি থেকে যে মিলন হয় তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলো ভালবাসার মিলন। এতে আপনার বৈবাহিক সম্পর্ক যেমন পাকাপোক্ত হবে তেমনি বিষণ্ণতা থেকে পাবেন মুক্তি।

পর্ণ আসক্তরা সারাজীবন এক ধরণের ঘোরের মাঝে কাটায়। তাদের কাছে সেই মডেল অভিনেত্রীরাই সৌন্দর্যের প্রতীক, তাদের মস্তিষ্ক ভার্চুয়াল উত্তেজনায় অভ্যস্ত হয়ে যায় ফলে স্ত্রী/স্বামীর সাথে মিলন বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। তরুণ আসক্তদের ক্ষেত্রে মানসিক বিকৃতি দেখা যায়। তাদের চিন্তা ভাবনা এমন স্তরে নেমে যায় যে, তারা মনে করে নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু। স্কুল, কলেজ রাস্তাঘাট এবং আশেপাশের সকল নারীদের নিয়ে বিকৃত ধারণা পোষণ করে। যৌনতা নিয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় উঠতি বয়সী মেয়েরা লজ্জা, ভয় এবং ঘৃণায় অনেক সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। শুধু তাই নয়, পর্ণের সহজলভ্যতা, ছোট ছোট শিশুদেরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আর শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় ব্যাপক ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।

নিষ্ক্রিয় অনুভুতি ও অসাড়তা পর্নোগ্রাফির বাহ্যিক রূপ। যৌনতায় সম্পর্ক তৈরী হয় না। সম্পর্ক তৈরী হয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা, যত্নশীলতা ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে। শীতকালে আগুনের পাশে বসে সঙ্গীর সঙ্গে রোমাঞ্চকর গল্প করার মত। যৌনতা শীতকালের সেই আগুনের মত অসাধারণ অনুভুতি। যে আপনাকে ভালবাসে এবং যে আপনাকে মনে-প্রানে মেনে নিয়েছে, যে আপনার সঙ্গে সারা জীবন থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার কাছে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন, তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক এক চমৎকার অনুভুতি।

পর্ণ আসক্তির কুফল জানা হলো, চলুন সমাধানটাও শুনে নেই।

  • পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেকে নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। প্রথমেই আপনার সংগ্রহে থাকা পর্ণ ভিডিওগুলো ডিলিট করুন। সাধারণত এ ব্যাপারে পর্ণ আসক্তদের বিশাল সংগ্রহ থাকে আর তাদের সংগ্রহ ব্যাপক।
  • নিয়মিত যেসব সাইটে ভিজিট করে আপনি আসক্ত হয়েছেন সেসব সাইট ব্লক করুন।
  • আপনার পরিবারের সদস্যদের পর্ণ জগতের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রাখতে হলে Parental Controls ব্যবহার করতে পারেন। তারপর প্রয়োজন মতো বাকি কাজ নিজের মতো করে করবেন। কিংবা আপনি চাইলে বাচ্চার কম্পিউটার টেবিল বাসার এমন জায়গায় সেট করতে পারেন যেখান থেকে তার মনিটর দেখা যায়। এতে আপনার সন্তান কিছুটা হলেও এর থেকে রেহাই পাবে।
  • অনেক আসক্তদের কিছুক্ষণ পর পর পর্ণ দেখতে হয় কিংবা কাজের মাঝামাঝি সময়ে পর্ণ দেখতে হয়। আপনি যদি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হন তবে পর্ণ ছাড়া আপনার পছন্দের কোনো সখ বা বিনোদনের উৎস খুঁজে বের করুন। কাজের মাঝে মাঝে পর্ণ না দেখে সেই পছন্দের কাজ করুন কিংবা গান শুনতে পারেন অথবা ৫ মিনিট হেঁটে আসতে পারেন বাহিরের মুক্ত বাতাসে। এতে আপনার মস্তিষ্ক এবং দেহ থাকবে সতেজ এবং ফুরফুরে।
  • আপনি যদি সত্যিই পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্ত হতে চান, তাহলে আপনাকে এই মুহুর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি সেই আসক্তি থেকে বের হবেন এবং সেই ভিডিওগুলো দেখা বন্ধ করবেন। হ্যাঁ জানি যেকোনও ধরণের আসক্তির মতই এই আসক্তি থেকে হঠাৎ বের হয়ে আসাটা অত্যন্ত কঠিন এবং কষ্টকর কিন্তু আপনার ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে এর যে প্রগাঢ় প্রভাব পড়েছে, পড়ছে এবং ভবিষ্যতে পড়বে সেটা আরো অনেক বেশি দুঃখজনক।

পর্ণ আসক্তি তাই পর্ণের কালো জাদুর মোহ থেকে বেরিয়ে এসে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একজন সুন্দর মনের মানুষ উপহার দিন। পাঠকের মনে হতে পারে এই পোস্ট শুধুমাত্র বয়স্কদের জন্য লেখা উচিত কিংবা যেখানে কম বয়স্ক পাঠকরা রয়েছে সেখানে এমন পোস্ট দেয়া উচিত নয়। তাদের জন্য বলছি, পর্ণের কালো জাদুর মোহে আপনার শিশু সন্তানও অন্ধকারের পথে পা বাড়াতে পারে। যে পর্ণ দেখে, তার এই লেখা বোঝারও বয়স হয়েছে। আমাদের দেশে যদিও যৌনতা এখনও ট্যাবু বা প্রকাশ্যে আলোচনা করার মত কোন বিষয় নয়। কিন্তু এই ট্যাবু ভেঙ্গে বাবা-মা, শিক্ষক এবং বয়স্কদের উচিত শিশু কিশোরদেরকে যৌনতা ও যৌন সম্পর্কের বিষয়ে সঠিক তথ্য জানানো।

আমাদের সংগ্রাম আপনার পাশে আছে! আপনি যদি হতাশার মধ্য দিয়ে যান এবং সাহায্য প্রয়োজন মনে করেন, তবে আমরা পাশে আছি। পর্নোগ্রাফির আসক্তি বাস্তব এবং আমরা আপনাকে পরামর্শ দেব, পথ দেখাব, যেন আপনি অথবা আপনার বন্ধু পর্নোগ্রাফির কালো জাদুর মোহ থেকে বের হয়ে আসতে পরেন।

ছবি স্বত্ব এন্ড্রু নিল

আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.