নীরবতায় কষ্টভোগ করা
এটা শুরু হয়েছিল যখন আমার বয়স মাত্র ছয়। আমার বাবার কাজের জন্য আমাদের পরিবার লিবিয়াতে থাকা শুরু করল। আমি প্রথমবারের মত প্লেনে চড়া নিয়ে অনেক আনন্দে ছিলাম। বিদেশে যাওয়াটাও আমার জন্য প্রথমবার কারণ আমাদের পরিবারে আমরাই প্রথম বিদেশের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছিলাম। আমি নতুন জায়গায় থিতু হওয়া এবং নতুন বন্ধু বানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
কিন্তু সমস্ত আশা ভেঙ্গে যায় এক দুঃখজনক দিনে, যখন ঘরের কাজের লোক আমাকে যৌন হেনস্থা করে। কেউ এই কথা জানত না। আমার সাহায্য চাওয়ার সাহস ছিল না। বাড়ির যে অংশে এই লোক কাজ করত আমি সেখানে যেতে ভয় পেতাম। এমনকি বন্ধুদের সঙ্গে থাকা অবস্থাতেও আমার মনে হত লোকটি আমাকে একা করে ফেলেছে। ভয়ে আমি নিজেকে বাথরুমে বন্দি করে ফেলতাম। আমি তখনই বেরোতাম যখন আমি নিশ্চিত হতাম যে বাড়িতে বড়রা চলে এসেছে। যদিও এই ঘটনা একসময় প্রকাশ পেয়েছিল এবং আমার হেনস্থাকারীকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।
আমি কখনও ভাবিনি বড়রাও ছোটদের ক্ষতি করতে চায়
কিন্তু আমার অগ্নিপরীক্ষা চলছিল। আমি আরও ছয় বছর ধরে আমার পরিবারের বিভিন্ন কাছের মানুষের কাছে নির্যাতিত হচ্ছিলাম। আমি জানতাম না কেন আমিই ভুক্তভোগী ছিলাম। এটা কি এজন্য ছিল যে আমি লাজুক মেয়ে ছিলাম? নাকি এই কারণ ছিল যে আমার পরিবার স্বচ্ছল ছিল না? আমার চাচাত ভাইবোনদের দেয়া লাঞ্ছনা কি আমাকে দুর্বল এবং ভীতু করে ফেলেছিল? আমি কখনও ভাবিনি যে বড়রাও ছোটদের ক্ষতি করতে চায়।
আমার মনে হত সমস্যা আমারই – আমি অভিশপ্ত ছিলাম। আমি লজ্জিত ছিলাম বলে মুখ খুলিনি। আমার পরিবার কি ভাববে? আমি কিছু না জানানোর মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে শুরু করলাম, আমি নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম আমি যদি যা কিছু ঘটেছে তা আমার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারি তাহলে এই নির্যাতন শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি যতই চেষ্টা করি না কেন, নিজেকে দোষারোপ করা থেকে আমি বেরোতে পারিনি। আমার মনে হত এই সব কিছুর মধ্যে আমিই খারাপ ছিলাম। আমার জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই চিন্তা ছড়িয়ে গেল। আমি কোন কিছুই ঠিক মত করতে পারছিলাম না।
আমি যত বড় হতে শুরু করলাম ততই আমার চিন্তাগুলোকে দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করলাম এবং আমার সাথে যা হয়েছে সেটাকে নির্যাতন হিসাবে মানতে পারছিলাম না। এটা কি এই জন্য কারণ আমিও উপভোগ করেছিলাম? আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবার জন্য সমস্ত স্মৃতিকে উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম যে ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে।
শেষ পর্যন্ত আমি ভেঙ্গে পড়ি। আমি নিজের মেয়েলি দিকটিকে ঘৃণা করতে শুরু করি। আমি ছেলেদের মত চলাফেরা করা শুরু করি আর আমি কাউকে আর বিশ্বাস করতে পারতাম না, বিশেষ করে আমার কাছের আত্মীয়দের। আমি সন্দেহবাতিক এবং আত্মরক্ষামূলক আচরণ শুরু করি।
আমার বয়স এখন প্রায় ৪০, কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনও মুছে যায়নি।
এখন আমি বুঝতে পারি যে আমার কথা বলার মত কেউ ছিল না। এমনকি ঘটনাটি জানার পরে আমার মা-বাবাও জানতেন না আমাকে কিভাবে সাহায্য করতে হবে। তারা চুপ করে ছিলেন, ভাবতেন সময়ের সাথে সাথে আমি ঠিক হয়ে যাব অথবা যা হয়েছে ভুলে যেতে পারব। আমি নিদারুণভাবে একজন বন্ধু চাইছিলাম যার উপর আমি নির্ভর করতে পারি – যে আমার সাথে কথা বলবে, আমাকে নিশ্চিত করবে যে যা হয়েছে সেখানে আমার দোষ ছিল না, এবং আমাকে বলবে আমি একা নই। আমি তেমন বন্ধুকে কখনই খুঁজে পাইনি।
আমার বয়স এখন প্রায় ৪০, কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনও মুছে যায়নি। আমি স্পষ্ট করে প্রতিটি হেনস্থা হওয়ার কথা মনে করতে পারি। এখন একজন মা হিসাবে, যখন আমার সন্তানেরা স্কুলে বা বাইরে খেলতে যায় আমি ভয়ে থাকি। আমি তাদের সাথে যৌন নির্যাতন নিয়ে কথা বলেছি এবং সতর্ক থাকতে শিখিয়েছি। পেছনে ফিরে তাকিয়ে আমি বুঝি, যদি আমি মুখ খুলতাম, সাহায্য চাইতাম, এবং নিজেকে দোষারোপ না করতাম এই যন্ত্রণা হয়ত অনেকটাই কমে যেত এবং আমাকে স্বাভাবিক ও সুখী বাল্যকাল পেতে সাহায্য করত।
আপনি যদি যৌন নির্যাতনের শিকার হন, দয়া করে আমার মত চুপ করে থাকবেন না। স্মৃতি ও যন্ত্রণাগুলো চাপা দেয়া কেবলই নির্যাতনকে আপনার উপর শক্তিশালী করে তুলবে। আপনার একাকী এর সম্মুখীন হবার প্রয়োজন নেই। আপনি বিনামূল্যে এবং গোপনে আমাদের একজন পরামর্শদাতার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন- তারা সহানুভূতিশীল শ্রোতা যারা আপনার আগের সমস্ত কথা শুনে আপনাকে সাহায্য করবেন। আপনি যদি নিচে আপনার সাথে যোগাযোগ করার তথ্য দেন, শীঘ্রই একজন পরামর্শক আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন। আপনি আপনার আসল বা ছদ্মনাম ব্যবহার করতে পারেন। এটা পুরোটাই আপনার উপর নির্ভর করে।
#####গোপনীয়তার স্বার্থে লেখিকার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।