আপনার বন্ধু হতাশায় ভুগছে জানার পর, আপনি কী করবেন?
আমার জীবনে অনেককে দেখেছি যারা হতাশা বা বিষন্নতার সাথে যুদ্ধ করছিল
একদিন পার্কের বেঞ্চে বসে আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম, কথায় কথায় সে আমাকে বলল যে, সে যতক্ষণ পর্যন্ত গাঁজা খেয়ে তার হতাশা দূর না করত, সে বিছানা থেকে উঠতে পারত না।
বেশ কিছুদিন ধরে, প্রায়ই সকালে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ভয়েজ মেইল পাচ্ছি। সে বলছে যে, একা একা থাকার কষ্ট কিছুতে সে দূর করতে পারছে না; তার ঘুম হচ্ছে না।
স্কুল কলেজের উঠতি বয়সী যুবক যুবতীদের সাথে যতবার কথা বলেছি, বেশীরভাগ সময় তারা আমাকে যে কথাগুলো বলেছে, সেগুলো হল, ‘আমি হতাশায় ভুগছি‘, ‘আমার মা/বাবা ভীষণ হতাশ‘’, ‘আমার ভাই/বোন হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে,’ ‘আমার চাচাত/মামাত/খালাত/ফুপাত ভাই/বোন হতাশায় ভুগছে ’, ‘আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু/বান্ধবী হতাশায় ভুগছে ‘।
এই কথাগুলো সবসময় আমার কানে বাজত।
আমার অনেক কাছের মানুষ আছে যাদের আমি প্রচন্ড ভালবাসি, তারাও আমাকে একইরকম অভিজ্ঞতার কথা বলত। যে ঘন কুয়াশা তাদের মনকে ঘিরে থাকত সেই কুয়াশাকে তারা ঝেঁড়ে ফেলতে পারছিল না। তাদের মনের উপর যেন ঘোর অন্ধকারের ভারি বোঝা চেপে বসেছিল। তাদের সবসময় মনে হত যে বেঁচে থেকে তাদের কোন লাভ নেই।
এই হতাশা বা বিষন্নতা শব্দগুলোকে একসময় খুবই স্বাভাবিকভাবে নেয়া হত। সাধারণত এই শব্দগুলো দিয়ে খারাপ দিন, সমস্যার কারণে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া, কারো মৃত্যুর শোক পালন ইত্যাদি এই ধরনের স্বাভাবিক মন খারাপের বিষয়গুলোকে বোঝানো হত। হতাশাকে একসময় দুঃখ, কোন কিছুতে কষ্ট পাওয়া, অথবা মন ভেঙ্গে যাওয়া ইত্যাদি ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করা হত।
আমি বলতে পারব যে আমার জীবনের বেশিরভাগ দিনই আমি হতাশা বা বিষন্নতা অনুভব করিনি। আমি এই “হতাশার” প্রবনতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলাম আর সেজন্য আমার কাছে মনে হত যে এই বিষয়টি নিয়ে ভাবার বা চিন্তা করার কোন কারণই নেই। এই কারণে আমার কাছের মানুষেরা যখন আমাকে বলত যে তারা এ ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন আমি আসলে এর প্রভাব বুঝতে পারতাম না। আমারও খারাপ সময় যেত, কিন্তু, আমি বরাবরই নিজেকে সামলে নিতাম আর জীবনে এগিয়ে যেতাম। কষ্ট হতো ঠিকই, কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমার মধ্যে এই বিশ্বাস ছিল যে, আমি নিজেকে যেভাবে গড়ে তুলব, আমার জীবনও সেইভাবেই প্রতিফলিত হবে। “আমার সুখ আমার উপর” এরকমটাই মনে করতাম।
কীভাবে হতাশায় ভুগছে এমন ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হয় আমি জানতাম না । তাদেরকে কী বলতে হয়, সেটাও আমার জানা ছিল না। তাই হতাশায় ভুগছে এমন কোন ব্যক্তির মুখোমুখি হলে আমি তাদেরকে এমন কিছু কথা বলতাম যেগুলো আমার একেবারেই বলা উচিত নয়।
সবসময় আনন্দে থাকো ! মন ভাল থাকবে।
প্রার্থনা কর, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আর একটু ভালভাবে চেষ্টা করো।
তোমার কষ্টটা আমি বুঝি।
তোমার জীবনের ভাল সময়গুলো নিয়ে চিন্তা কর।
কিন্তু হতাশা খুবই বাস্তব একটা বিষয়—এটাকে অস্বীকার করা যাবে না
জুন মাসের কোন এক দুপুরে, হাতাশা বা বিষন্নতার সম্পর্কে আমার যে মনোভাব ছিল সেটার পরিবর্তন হয়।
আমার মনে হয়েছিল যে আমি এমন একজন মানুষকে হারালাম যাকে ছাড়া বেঁচে থাকার কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না। আর এই ঘটনাটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল। বেশ কিছু ঘন্টা ধরে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার কাছে শুধুমাত্র তার রেখে যাওয়া একটা নোট আর কিছু ভয়ঙ্কর কথা ছাড়া কিছুই ছিল না। আমি প্রায় ২০টা ভয়েজ মেইল পাঠাই। তাকে বারবার এটাই বলি যেন সে তার নিজের কোন ক্ষতি না করে। সে হয়তো ইতোমধ্যেই নিজের ক্ষতি করে ফেলেছে, ভেবেই আমার মাথা প্রচণ্ড ব্যথা করছিল।
এমনও তো হতে পারত যে ঘুম থেকে উঠে আমি আর তাকে দেখতে পেতাম না। হয়তো সে চিরতরে আমার জীবন থেকে এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে পারত।
এর কারণ কী? কারণ হাতাশা একটা বাস্তব বিষয় আর এটাকে অস্বীকার করা যায় না। কারণ এই হতাশাই আমার সেই কাছের মানুষটিকে বহুদিন ধরে এই কথাই বলে এসেছে যে, সে হারিয়ে গেলে কেউ তার জন্য কষ্ট পাবে না।
বেশ কয়েক ঘন্টা পর তাকে খুঁজে পাওয়া গেল, আমরা এক সাথে গাড়িতে বসে ছিলাম। তার হাত ধরে আমি কাঁদলাম। আমি বুঝতেই পারছিলাম না যে আমার আসলে কী বলা উচিত, কীভাবে তাকে সাহায্য করা উচিত, কীভাবে তাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা উচিত। তবে একটি বিষয় আমি জানতাম যে, ওকে ছাড়া এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল।
শুনুন আর ভালবাসুন
তাই আমি চুপ করে থাকলাম। কোন কথা বললাম না। আমি শুধু এই ভাবনাতে ডুবে ছিলাম যে তাকে পাওয়া আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, সর্বশ্রেষ্ঠ অনুভূতি। মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে আমি কিছুতেই তার একাকীত্ববোধ আর দুঃখকে আমি মুছে ফেলতে পারছিলাম না।
সেই মানুষটার কথা শুনতে হবে আর তাকে ভালবাসতে হবে—
এই দুটি কাজ করা ছাড়া আমি যে আর কিছু করতে পারি, এই চিন্তাই আমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম
আমাদের গ্রহ, অর্থাৎ পৃথিবীর হাজারও সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি সমস্যা হতাশা। এটা, প্রত্যেক মানুষের জীবনে, বিশেষ করে যারা চিন্তাশীল, তাদের জীবনে, ধীরে ধীরে বিষের মত ছড়িয়ে পড়ে। আমি এখন বুঝি যে, হতাশা আমাকে, আপনাকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়। এই হতাশা বা বিষন্নতা আমাদের প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে এবং আমাদের প্রিয়জন, যাদের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে তাদেরকেও আক্রমন করতে পারে এবং আঁকড়ে ধরতে পারে।
এখন আমি বুঝতে পারি যে, এতগুলো বছর আমি আসলে অবহেলায় অনেকটা সময় নষ্ট করেছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি যে ধীরে ধীরে আমার বুঝার শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বুঝতে পারছি এই হতাশাকে প্রতিহত করার পিছনে আমার ভূমিকা কী।
মনে রাখুন, বিষয়টা আপনাকে নিয়ে না
আপনি যদি জানেন যে আপনার কোন বন্ধু হতাশার সাথে যুদ্ধ করছে, তাহলে আপনাকে প্রথমেই বুঝতে হবে যে, বিষয়টা আপনাকে নিয়ে না। আর এই প্রথম ধাপেই আমি অনেক সময় ভুল করতাম। আমি ভাবতাম যে, আমি এই পরিস্থিতিকে খুব সহজেই স্বাভাবিক করতে পারব। আমার ধারণা ছিল যে আমি যে কথাগুলো বলছি বা বলেছি, সেই কথাগুলো সত্যিই তাদের হতাশাকে জয় করতে সাহায্য করবে। আমি মনে করতাম যে তাদের কী প্রয়োজন সেটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।
অনেক সময় হতাশা বা বিষন্নতার বিষয়টা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। আমরা পুরো ব্যাপারটা ঠিক আন্দাজ করতে পারি না আর এই কারণে জটিলতাও বাড়ে। হতাশার মূল কারণ কী সেটা সঠিকভাবে জানা সত্যিই কঠিন।
এই সমস্যাকে কীভাবে জয় করা যায়? কাজটি কে করবে?
যারা হতাশার সঙ্গে যুদ্ধ করছে তাদের অনুভুতিকে সমর্থন করা বা “হ্যাঁ” বলা
আমার যতজন বন্ধুর সাথে আমি এই বিষয়ে কথা বলেছি, প্রত্যেকেই বলেছে যে তারা মনে প্রাণে চায় যেন কেউ তাদের এই অনুভূতিকে কেউ সমর্থন করে বা বলে যে “হ্যাঁ” এটাই স্বাভাবিক। সমাজ অনেক সময় আমাদের হতাশায় “আক্রান্ত” হওয়ার সময়টাকে ছোট করে দেখে, অবহেলা করে এমনকি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে। হতাশা বা বিষন্নতায় ভুক্তভোগী লোকেরা চায় যেন তাদের যন্ত্রনাকে কেউ বুঝতে পারে এবং এর তীব্রতার বাস্তবিকতা মেনে নেয়।
আসলে সামাজিক এই আচরণগুলো ঠিক না।
আপনি একা কেন কষ্ট পাবেন? এই বিষয় নিয়ে আপনি খুব সহজেই কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন।
আমাদের পরিবার, আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা চায় যেন আমরা তাদের কথা শুনি এবং তাদের কষ্টের ভাগি হই। তাদেরকে তাদের মনের কথা খুলে বলার সুযোগ করে দিতে হবে। অনেক সময় আমরা তাদের মনের যন্ত্রনাকে উপেক্ষা করে নিজেদের মন গড়া কথা বলতে থাকি। তারা চায় যেন আমরা তাদের পাশে থাকি এবং তাদের কষ্টের কথা শুনি।
আমাদের প্রত্যেকের অন্তরেই কোন না কোন বিষয় নিয়ে প্রতিদিন যুদ্ধ চলছে : হতে পারে সেটা হতাশা, হতে পারে সেটা নিজের প্রতি ঘৃণা, হিংসা, ক্ষত-বিক্ষত অতীত, প্রচন্ড ভয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্নতা, ইত্যাদি আরো হাজার হাজার যুদ্ধ। আমরা অনেক সময় এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না, কিন্তু এগুলোর বাস্তবতা অস্বীকারও করা যায় না। আমরা এর বাস্তবতাকে লুকাতে চাইলেও সত্যি কথা হল যে আমাদের খুবই ভাল লাগে যখন কেউ আমাদের কষ্টকে স্বীকৃতি দেয়।
এই পৃথিবী হতাশার প্রভাবকে অনুভব না করলেও,
আমাদের প্রিয়জনরা চায় যেন আমরা তাদের যন্ত্রনাকে অনুভব করি।
ভীষণ ভাল লাগে যখন আমাদের প্রিয়জনেরা আমাদের এই যুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়, সময় দেয়, সুযোগ দেয়। এই যুদ্ধে জয় লাভ করতে সময় লাগে, ধৈর্য্য লাগে, সহনশীলতা লাগে। আমরাও যেন আমাদের প্রিয়জনদের কষ্টের সময় তাদের পাশে থাকি।
আমরা জীবনকে যত অন্ধকারই মনে করি না কেন, যত ছোট করেই দেখি না কেন, আমাদেরকে আশা রাখতে হবে যে, কেউ না কেউ পাশে থেকে আমাদেরকে উৎসাহ দেবে, নিরাপত্তা দেবে।
প্রিয়জনদের মনের অবস্থা কি সবসময় বোঝা সম্ভব ? কোনভাবেই সম্ভব না।
প্রিয়জনদের কি সব সময় সাহায্য করা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব না।
আমরা কি তাদের পাশে থাকতে পারি ? যদি আমরা তাদের ভালবাসি, তাহলে সম্ভব !!
আমাদের সংগ্রাম আপনার পাশে আছে! আপনি যদি হতাশার মধ্য দিয়ে যান এবং মনে করেন যে আপনার এই মুহুর্তে সাহায্যের প্রয়োজন, তাহলে আমরা আপনার পাশে আছি। আমরা আপনাকে শুধু প্রার্থনা করতে বা আনন্দে থাকতে বলব না। হতাশা বা বিষন্নতা একটা বাস্তব বিষয় এবং আমরা আপনাকে পরামর্শ দেব, পথ দেখাব, যেন আপনি অথবা আপনার বন্ধু হতাশার যন্ত্রনাকে জয় করতে পরেন।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।