অর্থের সল্পতায় আনন্দ

আমরা একটা উৎসবকে কেন্দ্র করে পরিবারের সবাই মিলে খেতে বসেছি। আমার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা উৎসবের আনন্দে মেতে আছে। কিন্তু তখন আমার হাসি ফিরিয়ে দেবার কোন শক্তিই ছিল না।

অতীতের উৎসবের স্মৃতিগুলো আমার বারবার মনে পরছিল। আমি যে বেতন পেতাম, তার বিনিময়ে পার্থিব সুখ পেয়েছিলাম, প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব কিছুই কিনতে পারতাম। আমি আর আমার স্ত্রী তানিয়া বাচ্চাদের চমৎকার সব উপহার কিনে দিতাম। আমরা ছুটিতে ভ্রমনে যেতাম, শপিং করতাম, বাইরে খেতে যেতাম, সমুদ্র সৈকতে বসে প্রকৃতি উপভোগ করতাম।

কিন্তু সেই সময়গুলো এখন কেবলই স্মৃতি। দেশে আর্থিক মন্দা দেখা দিলে আমি আমার ভাল বেতনের চাকরীটা হারাই। এতে ঋণের ভারে আমি জর্জরিত হয়ে পড়ি। এই কারণে, তানিয়া আবার শিক্ষকতায় ফিরে যায়। কিন্তু তার আয় আমাদের আর আগের মত সেই পার্থিব সুখ দিতে পারছিল না।

মনে মনে ভাবছিলাম, "আমরা কি আর কখনো সেই হারিয়ে যাওয়া সুখ ফিরে পাব না ?"

##অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করল

এই দুঃখজনক পরিস্থিতির কারণে, আমরা লজ্জায় উপাসনালয়ের সবচেয়ে পিছনের চেয়ারে গিয়ে বসতাম। সবাই আমাদের আর্থিক অবস্থার কথা জানত, তাই সব রকম আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমরা পিছনে গিয়ে বসতাম, যেন কেউ আমাদের খেয়াল না করে। উপাসনার পর একদিন আমি সবার আগে পরিবারকে নিয়ে ওখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময় পিছন থেকে ডাক শুনলাম, "পার্থ দাঁড়াও!" পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, আমাদের পুরোহিত হাসিমুখে হাতে একটা খাম ধরে আছেন। কাছে এসে তিনি বললেন, "কেউ একজন আমার টেবিলে এটা তোমার জন্য রেখে গেছে।" সংকোচে খামটা হাতে নিয়ে খুলে দেখি ৪৫০০ টাকার একটা কেনাকাটার গিফট ভাউচার। তার ভিতরে একটা চীরকুট, যেখানে লেখা, "তোমার দিনটা শুভ হোক! ইতি, তোমার একজন শুভাকাঙ্খী বন্ধু!

দেখে লজ্জায় আমাদের মাথা নুয়ে পড়ে। তানিয়া আর আমি আমাদের জীবনে কখনো স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে আপোস করিনি, সবসময় এই মনোভাব আগলে রেখেছি। কখনও কারও কাছে সাহায্য চাইনি, এমনকি সৃষ্টিকর্তার কাছেও চাইনি।

"আমি এটা নিতে পারব না”, ওনাকে বললাম। উত্তরে তিনি বললেন, "তোমাকে নিতেই হবে পার্থ, কারণ, কে দিয়েছে তা তো আমি জানি না"। এক মুহূর্ত সেই গিফট ভাউচারের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই সাহায্য আমার সেদিন দরকার ছিল, তাই খামটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম।

বছরের পর বছর ধরে, আমরা আনন্দের সাথে আমাদের উপাসনালয়ে এবং সাহায্য সংস্থায় আর্থিক অনুদান দিয়ে এসেছি। এই কারণেই আমি ঐ গিফট ভাউচার গ্রহন করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল যেন কেউ আমার পেটে ভীষণ জোরে ঘুষি মারল। পুরোনো সেই প্রবাদটাই সত্যি হল: পাবার চেয়ে দেয়াই উত্তম। বাড়ি ফেরার পথে গাড়ির জানালা দিয়ে যখন বাইরে তাকিয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন আমার ভীতরটা অপমানবোধের তীব্র যন্ত্রনায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল।

##উৎসবের আনন্দ

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে, আমার ছেলে মেয়ের মধ্যেও উত্তেজনার কমতি ছিল না। ওরা স্কুল শেষ করে বাসার দরজার কাছে এসেই লাফালাফি করতে শুরু করে বলল, "চল চল বাইরে চল, আজকে পিৎজ্জা খাব”! আমি ফিসফিস করে বললাম, "মারে, আমরা আর আগের মত তোমাদের পিৎজ্জা কিনে খাওয়াতে পারব না, তবে এবার আমরা অন্যরকম কিছু করব"। শুনে, ওরা ওদের মার দিকে তাকিয়ে বলে, "আমরা সবসময় এই উৎসবে বাইরে গিয়ে পিৎজ্জা খাই, সিনেমা দেখি!!"

আমার ছেলেমেয়েরা ঠিকই বলেছে। সাধারণত, আমরা এই উৎসবে বাইরে খাই এবং সিনেমা দেখে সময় কাটাই। আমার মনে হচ্ছিল আমাদের সাথে অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে জীবনের মজার সময়গুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে!

তানিয়া বলল, "আমার একটা প্ল্যান আছে”, "আমরা বাসাতেই কেন পিৎজ্জা বানাই না ?!”

এই কথা শুনে আমার ছেলেমেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে গেল।

বলল, "খুব মজা হবে, চল বানাই!"

আমরা চারজন রান্না ঘরে গিয়ে ঘরে যা আছে সেগুলো এক জায়গায় করি। তারপর পিৎজ্জার রুটি বানাই, সস তৈরি করি আর টপিংস এর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তৈরী করি। এরপর সবকিছু এক এক করে সাজিয়ে ওভেনে দিই। তারপর আমরা টেবিল সাজাই, মোমবাতি সাজাই, আর সবাই খুশি মনে পিৎজ্জা খাই। খাবার শেষে সবাই মিলে সোফায় বসি। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে একসঙ্গে বসে একটা সিনেমা দেখি। সিনেমা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে আমার ছেলে বলে উঠে, “সময়টা বেশ মজার ছিল, চল আমরা প্রতি সপ্তাহেই এরকম করি”। এই আনন্দ অর্থের কষ্টকে মুছে দিল। তাঁর মহা আশীর্বাদের জন্য আমরা সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিলাম। পরের দিন সকালে আমার ছেলেমেয়ে ঘুম থেকে জেগে তাদের বিছানার পাশে দু’টা উপহার পেয়ে ভীষণ খুশি হল। আমার স্ত্রী তার বেতন থেকে কিছু টাকা জমিয়ে তাদের জন্য ওগুলো কিনেছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী এ বছর কোন উপহার বিনিময় না করার সিদ্ধান্ত নিলাম।

##সল্পতার সরলতায় গভীর আত্ম-তৃপ্তিবোধ

আমি উপলব্ধি করতে শুরু করলাম যে আমার স্ব-নির্ভরতার মানসিকতা আমাকে সৃষ্টিকর্তার মূলভাব থেকে আলাদা করে ফেলেছে। আমার ভিতরে যদি সত্যিকারের সুখবোধ তৈরি হয়, তবে সেই উপলব্ধিই হবে জীবনের প্রকৃত রূপ। সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরতা ও এই জীবনকে তাঁর প্রদত্ত উপহার হিসেবে মেনে নিয়ে তাঁর প্রশংসা করার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পেলে সুখবোধের তৃপ্তি পাওয়া যায়। সৃষ্টিকর্তা তখনই আমাদের যত্ন নেন, যখন আমরা আমাদের আমিত্ব ও আত্ম-কেন্দ্রীকতাকে বিসর্জন দিয়ে তাঁর সাথে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।

এতে তাঁর প্রতি আমার বিশ্বাস এবং আস্থা বৃদ্ধি পায়। আর আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি যে, পরের সপ্তাহ থেকে বন্ধুরা আমাদের জন্য বিভিন্ন উপায়ে নানা উপহার পাঠাতে শুরু করেছে। কেউ কেউ আমাদের ঋণের বোঝাও তুলে নিয়েছে।

এক সন্ধ্যায় তানিয়া হাসতে হাসতে বলল, "সৃষ্টিকর্তা আমাদের খেয়াল রাখছেন, "আমরা ঠিক আছি।"

সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের আস্থা দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়, এতে আমরা শান্তি পাই। যখন অর্থ ছিল, আমরা নতুন কিছু কিনলে আনন্দ পেতাম, কিন্তু এখন টাকা সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মনে এক ধরনের সুপ্ত ও গভীর আনন্দ অনুভব করতে পারি। আমার ছেলের পরামর্শ অনুসারে বেশীরভাগ শুক্রবার আমরা পিৎজ্জা তৈরি করেছি এবং ঘরে বসে সিনেমা দেখেছি। আর ছাড়-কূপন কিনে সাধারণ মুদির দোকান থেকে বাজার করেছি, ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কাপড় কিনেছি। টাকা সঞ্চয়ের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার আরও সান্নিধ্য লাভ করেছি। পরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আমরা ঐ নতুন জীবন যাপনের সাথে মানিয়ে নিয়েছি। আমার আগের উদ্বেগের কথা চিন্তা করে আমি উপলব্ধি করলাম যে সৃষ্টিকর্তা আমাকে একটা বিশেষ উপহার দিয়েছেন, আর সেই উপহার হল:

“অভাবের মধ্যে এবং অনেক থাকার মধ্যে আমি সন্তুষ্ট থাকতে জানি। ভরা পেটে হোক বা খালি পেটে হোক, অনেক থাকার মধ্যে হোক বা অভাবের মধ্যে হোক- সব অবস্থাতেই কিভাবে সন্তুষ্ট থাকা যায় আমি তা শিখেছি। যিনি আমাকে শক্তি দান করেন তাঁর মধ্য দিয়েই আমি সব কিছু করতে পারি ”। (ধর্মগ্রন্থ থেকে নেয়া )


আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.