যে মিথ্যা কথাগুলো আমরা বিশ্বাস করি
আমরা প্রতিদিনই অনেক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনি, যেমন:
“আপনি একজন বিশ্বমানের বেহালাবাদক হয়ে উঠবেন।” “১০ মিনিটেই ১০ পাউন্ড ওজন কমে যাবে। ঘরে পরা কাপড়েই এই সহজ ব্যায়ামটি সেরে নিতে পারবেন।” “একদিনে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনি সুন্দর ও সতেজ হয়ে উঠবেন।”
ছলচাতুরীর জিলাপীর প্যাঁচে ভরে গেছে আমাদের এই সমাজ। উপরের বিজ্ঞাপনের অস্বাভাবিক ও অদ্ভুত সব দাবীগুলো লক্ষ্য করলেই তা বোঝা যায়, যা সমাজের সবক্ষেত্রেই বিরাজমান। কোন কোন সময় সেই মিথ্যার চালাকী সহজেই বোঝা যায়। তবে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সেই প্রবঞ্চনা বোঝা সহজ হয় না।
বিজ্ঞাপনের এই ছলচাতুরী মানুষের স্বাভাবিক বাসনার স্থানকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। এতে আমরা বিশ্বাস করে নেই যে, সেই অপ্রয়োজনীয় বাড়তি ওজন আসলেই ১০ মিনিটেই কোন ব্যাথা, কোন পরিশ্রম, কোন প্রাত্যহিক ব্যায়াম, কোন ঘাম ছাড়াই রহস্যজনকভাবে কমে যাবে। আর এই কারনেই আমরা ঔষধ কিনি, যে পাউডার পানিতে মিশালে কম খিদে পায় সেই ধরণের পানীয় গ্রহন করি এবং অবানিজ্যিক ব্যায়াম সামগ্রী কিনি।
##এই মিথ্যের প্রবঞ্চনা শুরু হয়েছিল এদোন বাগানে।
আর এর সূত্রপাত হয়েছিল একজন চতুর ও ধূর্তবাজ মধ্যস্থতাকারীর বিজ্ঞাপনের প্রচারনার দক্ষ কৌশলের মধ্য দিয়ে। আদম ও হবার ঈশ্বর সম্পর্কীত চিন্তা ও পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোই ছিল সেই মধ্যস্থতাকারীর মূল লক্ষ্য। ঈশ্বর ও তাঁর সৃষ্টির মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়ানোই ছিল শয়তানের প্রধান উদ্দেশ্য। সে ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল যে আদম ও হবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলা কোন কিছু হয়ত স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। এই কারণেই শয়তান জানত যে তাদেরকে প্রতারিত ও ভুলাবার জন্য একটি গ্রহনযোগ্য, আকর্ষনীয় এবং সম্পূর্ণ “ঈশ্বর-বিহীন” নয় তেমনি এক লোভনীয় সুযোগ তৈরী করলেই কৌশলে তাদের ভুলানো যাবে।
আর তাই সে সরাসরি মিথ্যা, অর্ধ-মিথ্যা, সত্যের ছদ্মবেশে মিথ্যা ইত্যাদি মিশ্রিত চালাকির মাধ্যমে হবাকে প্রতারিত করেছিল। “ঈশ্বর কি সত্যি বলেছেন.....?” (আদিপুস্তক ৩:১) - এই কথায় হবার মনে সন্দেহের বীজ বপনের মধ্য দিয়ে তার ছলনা শুরু করেছিল।
ঈশ্বর আসল কথা তোমার কাছে গোপন রেখেছেন - পরবর্তিতে শয়তান হবাকে এই ধারণা দিয়েছিল, তাই সে হবাকে ঈশ্বরের বাক্যকে অবহেলার চোখে দেখতে উৎসাহিত করেছিল। । ঈশ্বর বলেছিলেন, “তোমরা তা খাবে না”। ঈশ্বর প্রদত্ত এই কথাটিও হবা বলেছিলেন, “তোমরা তা স্পর্শ করবে না” (আদিপুস্তক ৩:৩ পদ)। ঈশ্বরের মঙ্গলভাব, প্রেম ও লক্ষ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে শয়তান হবাকে প্রতারিত করেছিল। সে জিজ্ঞাসা করল, “ঈশ্বর কি সত্যি তোমাদের বলেছেন যে, বাগানের সব গাছের ফল তোমরা খেতে পারবে না?” - এই কথায় শয়তান আসলে বুঝাতে চাইল যে, “ঈশ্বর কি তোমাদের স্বাধীনতায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছেন না? শুনে মনে হচ্ছে তিনি চাইছেন না যে তোমরা সুখে থাকো”।
আসলে ঈশ্বর বলেছিলেন, “কেবল একটি বৃক্ষের ফল ব্যতীত তোমরা এই উদ্যানের যে কোন বৃক্ষের ফল খেতে পার” (আদিপুস্তক ২:১৬ পদ)।
তিনি উদার ঈশ্বর এটাই সত্য। সেই বিশাল বাগানের কেবল এক স্থানে তিনি ‘সরে থাকো’ এই সতর্ক সংকেত দিয়েছিলেন। এই দম্পত্তির মঙ্গলার্থেই তিনি একটিমাত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল যেন তাদের জন্য তাঁর দীর্ঘস্থায়ী আশীর্ব্বাদ ও সুখ সত:সিদ্ধ হয়। সেই বৃক্ষের ফল খেলে যে তাদের মৃত্য হবে, তাদের সাথে তাঁর সম্পর্ক জটিল হবে, আর এতে তারা শয়তানের, পাপের ও নিজের কৃতদাস হয়ে পড়বে, তা তিনি জানতেন।
তথাপি হবা খেলেন। আর প্রতিজ্ঞাত পুরষ্কারের বদলে একমুখ কীটপতঙ্গ খেলেন। যেমন, দোষ, ভয়, বিচ্ছেদ ইত্যাদি খাওয়ার মত। সে মিথ্যের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়লো ও প্রতারিত হলো।
##মূল প্রতারক
টমাস ব্রুক্স তার বিষয়ে এইভাবে বর্ণনা করেছেন:
“চরম মন্দতার মূল্য হিসেবে শয়তান উত্তম উত্তম প্রতিজ্ঞা করে; সে সু-খ্যাতির প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু জন্ম দেয় কলংক; আনন্দের প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু জন্ম দেয় যাতনা; লাভের প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু জন্ম দেয় ক্ষতি; জীবনের প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু জন্ম দেয় মৃত্যু।
সে প্রথম থেকে এই পর্যন্ত তার ছলচাতুরীর কৌশল ব্যবহার করছে যেন তার প্রতি আমাদের ভালবাসা জয় করতে পারে, আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা-শক্তি কে প্রভাবিত করতে পারে এবং পরিশেষে আমাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যেভাবেই আমরা ভাবি না কেন, এই পৃথিবীতে আমরা যে সমস্যারই মুখোমুখি হই না কেন তা কিন্তু সেই প্রতারণারই ফল।”
শয়তান “প্রকৃত জীবনের” উজ্জল প্রতিজ্ঞাকে বাঁধা দিয়ে রাখে; কারণ সে জানে তার মিথ্যা ছলনায় যেকেউ সাড়া দেবে, সে মরবেই মরবে (হিতোপদেশ ১৪:১২)।
আমরা কেন তাহলে শয়তানের প্রতারনার বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ি? কেনইবা আমরা প্রলোভনে পড়ি? একটিমাত্র কারণ হলো, শয়তান সচরাচর সাপের রূপ নিয়ে আসে না, বরং সে সর্বাধিক বিক্রিত সংবাদ পত্র, চলচ্চিত্র, টিভি শো, অথবা চার্টের প্রথম সারির ১০টি গানের ছদ্মবেশে হাজির হয়। সে এমনকি আন্তরিকভাবে উপদেশ দেয়া আত্মীয় বা বন্ধুর ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে, একজন থেরাপিষ্ট, একজন ধর্মের লেখক, প্রচারক বা ধর্ম উপদেষ্টার ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে।
সদ্য পাওয়া কোন উৎস থেকে আসলেও, যখনই আমরা ঈশ্বরের বাক্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোন তথ্য পাই, আমরা নিশ্চিত হব যে, শয়তান আমাদের ধ্বংস করবার জন্য প্রতারণার চেষ্টা করছে। আমরা যা পড়ি, শুনি বা ভাবি তা সঠিক মনে হতে পারে, কিন্তু যদি তা ঈশ্বরের বাক্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে তা সঠিক নয়। আমরা একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করতে পারি যে, সেই নিষিদ্ধ ফলটি যদি প্রথম দর্শনেই দেখতে একেবারে পাকা এবং মিষ্টি স্বাদে ভরপুর মনে হয়, কিন্তু অবশেষে মৃত্যু ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
##বন্দীদশা থেকে মুক্ত হবার উপায়
আমরা সকলেই আমাদের জীবনে কোন না কোন অবস্থানে বন্দী হয়ে আছি, কারণ আমরা সেই মিথ্যার ছলনায় সাড়া দিয়েছি, বিশ্বাস করেছি, কান দিয়েছি। সেই মিথ্যার দাসত্বের বন্ধন থেকে আমরা কিভাবে পালাব এবং স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাব?
নীচের তিনটি ধাপ পার হলেই তা সম্ভব।
###১) পাপেপূর্ণ আচরণ বা বন্দীত্বের দিকগুলো চিহ্নিতকরণ:
আপনি তো বুঝতেই পারছেন সেই দিকগুলো আসলে কি হতে পারে। আবার কোন কোন দিক স্পষ্ট নাও হতে পারে। কোন্ কোন্ দিকগুলোতে আপনি মুক্ত না, তা ঈশ্বরকে দেখাতে বলুন। বাইবেল বলে, “কেউ যদি কোন কিছুর কাছে হার মানে তবে সে তার দাস হয়।” (২য় পিতর ২: ১৯)।
ঈশ্বরের সন্তান হিসেবে আপনার জীবনের কোন্ বিষয়গুলো আপনার মুক্ত জীবন যাপনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়? আপনি কি শারীরিক কোন কিছুতে বন্দী (অতিমাত্রায় ভোজন, খাদ্যাভাস জনিত অসুস্থতা, কোনকিছুতে মাত্রাতিরিক্ত নেশাগ্রস্থতা ইত্যাদি)? আপনি কি মানসিক কোন কিছুতে বন্দী (অস্থীরতা, ভয়, হতাশা, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক অসুস্থতা)? আপনি কি কোন যৌনাচারে বন্দী (মাংসিক লোভ, পর্ণোগ্রাফী, বিবাহ বহির্ভুত যৌন ক্রিয়া)? আপনি কি অর্থনৈতিকভাবে বন্দী (অতিরিক্ত ব্যয়, লোভ, কৃপনতা)? এমন কোন পাপের অভ্যাস আছে কি যা আপনাকে কষ্ট দেয় (ক্রোধ, মিথ্যাচার)? আপনি কি অতিমাত্রায় লজ্জা, বেশী কথা বলা, রোমাঞ্চকর গল্প বা টেলিভিশনে আসক্ত? ঈশ্বর হয়ত: আরও অনেক বিষয়ই আপনার মনে আনবেন যেগুলোতে আপনি বন্দী হয়ে আছেন।
যখনই আপনি ঐ সকল বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে পারবেন, সেগুলো তখনই বাদ দেবার চেষ্টা না করাই ভাল। হতে পারে আপনি এরই মধ্যে ঐ অভ্যাসগুলো মুছে ফেলতে যুদ্ধ করেছেন, কিন্তু হাল ছেড়ে দিয়েছেন। আপনার বাগানে কোন গাছে বিষাক্ত ফল ধরেছে যদি মনে করেন, তবে আপনি নিশ্চয় চাইবেন সেই ফলগুলো ছিঁড়ে ফেলতে, কিন্তু এতে তো নতুন নতুন আরও বিষাক্ত ফল দেখা দেবে। সবচেয়ে উত্তম হবে যদি আপনি সম্পূর্ণ গাছটি শেকর থেকেই উপড়ে ফেলতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে নীচের ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
###২) আসক্তির এই বন্দীদশার মূলে যে ছলচাতুরী, তা চিহ্নিতকরণ:
কি ধরণের মিথ্যায় আপনি কান দিয়েছেন, বিশ্বাস করেছেন এবং সক্রিয় হয়েছেন, যেগুলো আপনাকে বন্দী করে রেখেছে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়ত সাথে সাথেই আপনি ভেবে নাও পেতে পারেন - কারণ সাধারণত কোন কিছুর মূল জিনিসটি বিষয়বস্তুর গভীরে লুকানো থাকে। মিথ্যার স্বভাবগত বৈশিষ্ঠ হলো প্রতারণা করা। এই বিষয়টিকে গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হলে ঈশ্বরের সাহায্য প্রয়োজন।
###৩) মিথ্যা বর্জন করে সত্য’কে বরণ করে নেওয়া:
শয়তান কিন্তু খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আর ছলচাতুরী বা প্রতারিত করাই তার প্রধান যুদ্ধাস্ত্র। তার মিথ্যাগুলোও প্রচন্ড শক্তিশালী। অন্য দিকে, মূল সত্য কিন্তু শয়তানের মিথ্যার চেয়েও আরও অনেক বেশী শক্তিশালী।
আমরা যে মিথ্যার বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছি এবং বিশ্বাস করেছি, সেই বিষয়টি যদি উপলব্ধি করতে পারি, তবে ঐ সকল ছলচাতুরীর প্রতারণাকে আক্রমন করার অস্ত্র পেয়ে যাই। আর এই অস্ত্রের নাম হলো ‘সত্য’।
প্রতিটি মিথ্যাকে এই সত্য দিয়েই পরাজিত করতে হবে। যে মিথ্যাকে আমরা প্রশ্রয় দিয়েছি, বিশ্বাস করেছি, লালন পালন করেছি, শুনেছি, সেই মিথ্যাকে বর্জন করে সত্য’কে বিশ্বাস করতে, কর্ণপাত করতে, ধ্যান করতে ও জীবনে কাজে লাগাতে আরম্ভ করতে হবে। আর এভাবেই আমরা পবিত্র আত্মার শক্তিতে বন্দীদশার বেড়াজাল ছেদ করে স্বাধীনতার বা মুক্তির পথে যাত্রা করতে পারি। যোহন ৮:৩২ পদে যীশু বলেছেন, “সত্য তোমাকে স্বাধীন করবে”।
আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।
এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!
দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।