আত্মসম্মানবোধ ফিরে পেলাম

আমরা যখন কোন কথা বা বিষয় বা ঘটনা বারবার শুনে সেগুলোকে একটা সময় পর সত্য হিসেবে মেনে নিতে শুরু করি। আশ্চর্য মানুষ আমরা, তাই না! আপনার কি কখনো আমার মত এই ধরণের উপলব্ধি হয়েছে? ধরুণ, আপনি ঝুঁকি নিয়ে একেবারে ভিন্ন স্টাইলে চুল কাটলেন। আয়নায় নিজেকে দেখে বেশ খুশি হলেন। পরের দিন আপনার কোন প্রিয় পোশাক পরে অফিসে গেলেন। মনে মনে ভাবছেন, “আমাকে এই স্টাইলে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে, চমৎকার লাগছে!” আপনি অফিসের লিফটে ঢুকলেন এবং একজন আপনার দিকে ফিরে কপাল কুঁচকে বললেন, "হায়! হায়! আপনি চুল কেটে ফেলেছেন। কাটলেন কেন?" শোনার সাথে সাথে আপনি আপনার চুলে হাত দিলেন আর ভাবলেন, ‘ইশ! টুপি থাকলে ভাল হতো!’ মন খুব খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলেন, ‘কেন যে চুলটা কাটলাম!’

অনেক নারীই আত্ম-সম্মানবোধের অভাবে ভোগেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, আমরা খুব সহজেই আমাদের সম্পর্কে অন্যের মতামত বা রায়কে সঠিক বলে মেনে নেই। এই কারণেই আমাদের নিজেদের প্রতি নিজেদের বিশ্বাসের জায়গাটা ভয়ানকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। হাই স্কুলে পড়ার সময় কয়েকজন ছেলে বন্ধু প্রায় প্রতিদিনই আমাকে জ্বালাতন করত, বলত, তুই বোকা আর দেখতেও খুব বাজে। আমি তাদের কথা বিশ্বাস করতাম। আমার বাবা-মা একে অপরকে ভীষণ ভালবাসতেন এবং উৎসাহ দিতেন। সেদিক থেকে আমি খুবই সুখী ছিলাম। ক্লাস থ্রী থেকেই আমার একজন প্রিয় বান্ধবী ছিল যে সবসময় আমার পাশে আঠার মত লেগে থাকত। সেদিক থেকেও আমি সুখী ছিলাম। স্কুলের ঐ ছেলেরা আমাকে বলত, আমার নাকি কোন দামই নেই। আমি মনে প্রাণে তাদের কথা বিশ্বাস করতাম। এই কারণে আত্মসম্মানবোধের অভাবে আমি প্রচন্ড হীনমন্নতায় ভুগতাম। ঐ উপলব্ধিটা আমাকে প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল

##আত্মসম্মানবোধ আসলে কী?

আত্মসম্মানবোধকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা আসলে কঠিন। শুধুমাত্র নিজের সম্পর্কে ভালো অনুভব করাই কিন্তু যথেষ্ট না, নিজের সাফল্যে গর্ব করাও যথেষ্ট না, আবার আয়নায় নিজেকে দেখে আকর্ষনীয় ভাবাও যথেষ্ট না। আত্মসম্মানবোধ হল আমাদের নিজের প্রতি নিজের মূল্যায়নের জায়গায় মূল্যবোধ সৃষ্টি করা। ফাউন্ডেশন অফ সাইকোপ্যাথনোলজি নামক বইয়ে ডঃ জন নিহামায়া “নিজেকে মূল্যবান হিসেবে দেখার সক্ষমতা”-কে আত্মসম্মানবোধের সংজ্ঞা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

##নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধের পরিণতি

আমার নিজের উপরে নিজের নির্ভরতার জায়গাটা দূর্বল হতে থাকলে এবং আত্মসম্মানবোধের উপলব্ধি শুকিয়ে যেতে থাকলে, আমি ক্লাসে, আড্ডায়, স্কুলের করিডোরে চলার পথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। স্কুলের ক্যান্টিনে খেতে গেলে ভীষন আতঙ্কিত থাকতাম, এমন কি আমি ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে ভিতরেও ঢুকতে চাইতাম না। ক্লাস প্রেজেন্টেশন কীভাবে দেব সেই চিন্তায় বাস্তবেই অসুস্থ হয়ে যেতাম। ক্লাস প্রেজেন্টেশনে আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম, হাসি-তামাসা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আমি মূল্যহীন- এই চিন্তা দিনে দিনে আমার ভিতরে দানা বাঁধতে শুরু করে। স্কুলের পরীক্ষার ফলাফলে আমি সবসময়ই সেরা থাকলেও প্রতিটা পরীক্ষায় আমি প্রচন্ড মানসিক চাপ অনুভব করতাম। আমার বারবারই মনে হত যে ‘ইশ আমি যে এখানে আছি সেটা যদি সবাই ভুলে যেত, তাহলে হয়ত আমি এই যন্ত্রনাবোধ থেকে রেহাই পেতাম! কিন্তু এই যন্ত্রণার কোন শেষ ছিল না। আমি এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে চাইতাম। কিন্তু এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হবার উপায় কি তার কোন কুল-কিনারা আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। রূপকথার গল্পের মত পালিয়ে যাবারও স্বপ্ন দেখতাম না। আসলে আমি মনে মনে আত্মহত্যা করার কথা পরিকল্পনা করছিলাম।

##নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধ ও বিষণ্ণতা

নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধ থেকেই সবসময় বিষণ্ণতার জন্ম হয় না, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে এই দুই মানসিক উপলব্ধি প্রায়ই হাতে হাত ধরে এক সাথে চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিস্তেজ আত্মমর্যাদাবোধকে বিষণ্ণতাবোধ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধের উপলব্ধি একসময় আপনাকেই নিজের শত্রু করে তুলবে। যেমন, “যদি আমি আরো সুন্দর হতাম, যদি

আমি খেলাধুলায় ভালো হতাম, যদি আমি জনপ্রিয় কেউ হতাম, যদি আমার এই কষ্ট থেকে মুক্ত হবার যথেষ্ট শক্তি থাকত ” ইত্যাদি। যদি কেউ আমার প্রশংসা করত, তখনই আমার মনে হত যে সে আমার তোষামোদ করার বা আমাকে ভোলানোর চেষ্ট করছে। “প্রিটি ওমেন” চলচ্চিত্রে জুলিয়া রবার্টস একটি সংলাপে বলেছিলেন, “অপ্রীতিকর কোন কিছু বিশ্বাস করা সহজ ”।

বিষণ্ণতার লক্ষণগুলোকে প্রায়ই মানসিক বিষয় হিসেবে দেখা হয়। এই কারণে সমস্যাগুলোকে অপ্রয়োজনীয় অনুভূতি, হরমোন জনিত ব্যাপার অথবা বয়স বৃদ্ধি পাবার অংশ মনে করে, এগুলোকে তুচ্ছ ভাবা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী গবেষণা করে দেখেছেন যে, “বিষণ্ণতার ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশেরও কম মানুষ সেবা নিতে আসে”। নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধে যারা ভুগছে তাদের প্রতি মনোযোগ দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে, যাদের মধ্যে মৃত্যুর তিনটি প্রধান কারণের মধ্যে আত্মহত্যা হল অন্যতম। এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধের কারণে কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হারিয়ে ফেলে। তারা সামনে এগিয়ে যাবার আগ্রহে হারিয়ে ফেলে, সঙ্গীর সঙ্গে দৈহিক ও মানসিক সম্পর্কে অনিহা দেখা দেয় এবং অক্ষম পিতামাতায় পরিণত হয়। নিস্তেজ আত্মসম্মানবোধ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই প্রভাবিত করতে পারে। ভীষণ চিন্তার বিষয়, তাই না? তা হলে, এর প্রতিকার কী?

##নিরাময় বা প্রতিকার

আমার ক্ষেত্রে, এই পরিস্থিতি স্কুল জীবনের শেষ পর্যন্ত চলছিল। এরপর কলেজে উঠার পর ঠাট্টা, তামাসা, অসম্মান থেমে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু আমার ভিতরের নিস্তেজ অসম্মানবোধের উপলব্ধি আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাবার জন্য দৌড়াচ্ছি, কিন্তু তবুও সেই অনুভূতি আমার পিছু ছাড়েনি। আত্মমর্যাদাহীনতার জায়গায় নিরাময় লাভ করতে শুধুমাত্র স্থান পরিবর্তনই যথেষ্ট না, এর জন্য প্রয়োজন নিজের প্রতি নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।

নিজের সম্পর্কে যখন আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, তখন পৃথিবীটাকে একটি ভয়ংকর জায়গা মনে হয়। আপনি আত্মসম্মানবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য কোন সম্মেলনে গিয়ে, এই বিষয়ে কোন বই পড়ে, অথবা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিলে, এই মৃত্যুনাশী উপলব্ধি থেকে নিস্তার পেতে পারেন। আমি যখন এমনটা করলাম, আমার ভেতরে আত্মসম্মানবোধ জেগে উঠল। এই চেতনাবোধের মধ্য দিয়েই আমার নিরাময়ের যাত্রা শুরু হল। আমার মনে এর থেকে বের হওয়ার আশার আলো জ্বলে উঠল।

আমার ভিতরের সেই ক্ষতি ও ক্ষত সেরে উঠতে বেশ কিছু বছর লাগলেও মুক্ত হবার আনন্দ বরাবর ছিল। ও আচ্ছা! ভুলেই গেলাম, আমার তো চুল কাটতে যেতে হবে!!

ছবি স্বত্ব কাইক সিলভা

আপনার একা লড়াই করার প্রয়োজন নেই। একজন নির্দেশকের সাথে কথা বলুন, এটি গোপন থাকবে।

এই সংগ্রামের সাথে লড়াই করা কঠিন। আপনি যদি নিজের বা অন্যকে ক্ষতি করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে, এটি পড়ুন!

দয়া করে নীচের ফর্মটি পূরণ করুন যাতে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। উল্লেখিত ফিল্ট ছাড়া বাকি সব ফিল্ডগুলি আবশ্যক।

আপনার লিঙ্গ:
বয়স সীমা:

আপনার জন্য সঠিক মেন্টর নিযুক্ত করার জন্য আপনার লিঙ্গ ও বয়স জানতে চাই। ব্যবহারের শর্তাবলী & গোপনীয়তা নীতি.